সময়টা ছিল রাত পৌনে ১টা। ২০১৪ সালের মার্চে দক্ষিণ চিন সাগরের আকাশ থেকে ২২৭ জন যাত্রী নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়ান। তাকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি।
শনিবার মাঝরাতে ওই একই সময়ে কলকাতায় ফিরে এসেছিল সেই ভয়াবহ স্মৃতি। শহর থেকে রাত সওয়া ১২টা নাগাদ ৫০ জন যাত্রী নিয়ে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে ওড়ার আধ ঘণ্টা পরে স্পাইসজেটের একটি বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কলকাতার। তবে তফাত আছে। সাত বছর আগে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের সেই এমএইচ৩৭০ উড়ান হারিয়ে গিয়েছিল এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-র মনিটর থেকেও। শনিবার রাতে স্পাইসজেটের উড়ানটির সঙ্গে মৌখিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও সেটি মনিটর থেকে হারিয়ে যায়নি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে, রাত ২টো ১০ মিনিটে বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়।
ওড়ার পরে কেন বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে গিয়েঠিল, সেই বিষয়ে তদন্তে নেমেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)। দেশের আকাশে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক ওই সংস্থার কর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট উড়ান সংস্থার কাছে আজ, সোমবার সবিস্তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হবে। এ দিন ওই উড়ান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছু বলতে চায়নি।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শনিবার রাতে অন্তত ৫০ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি রওনা হয়। ছোট কিউ-৪০০ বিমান। ২৪ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল চেন্নাইয়ের দিকে। ভুবনেশ্বর পৌঁছতে তখনও প্রায় ৪০ কিলোমিটার বাকি ছিল। রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে আচমকাই বিমানের সঙ্গে রেডিয়ো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এটিসি-র। উচ্চতা, বিমানের গতিপথ, গতিবেগ, খারাপ আবহাওয়া, জরুরি অবস্থা— সব কিছু বিষয়েই পাইলট ও এটিসি-র মধ্যে নিরন্তর
যোগাযোগ চলতে থাকে। রেডারের মাধ্যমে বিমানের ছবি ফুটে ওঠে এটিসি-র মনিটরে। তা দেখে পাইলটকে ক্রমাগত নির্দেশ দিতে থাকে এটিসি।
শনিবার রাতে স্পাইসজেটের ওই বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে এটিসি ‘ইমার্জেন্সি ফ্রিকোয়েন্সি’ দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কাজ হয়নি। শেষে ওই বিমানের আশপাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া অন্য বিমানের পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বলা হয়, স্পাইসজেটের ওই বিমানের সঙ্গে তারা কোনও ভাবে যোগাযোগ করতে পারে কি না দেখুক। কিন্তু চেষ্টা করেও অন্যান্য বিমানের পাইলটেরা স্পাইসজেটের পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন।
কলকাতার এটিসি থেকে অন্য সব বিমানবন্দরকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণ ভাবে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাওয়ার পথে প্রথমে কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি এবং পরে বিশাখাপত্তনমের এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন পাইলটেরা। বিশাখাপত্তনমের পরে চেন্নাইয়ের এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই বিমানবন্দরে নামে বিমান। শনিবার রাতে স্পাইসজেটের ওই উড়ানের জন্য সতর্ক করা হয় বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরের এটিসি-কেও।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ক্রমাগত চেষ্টার পরে রাত ২টো ১০ মিনিটে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরের এটিসি-র সঙ্গে স্পাইসজেটের ওই বিমানের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন এটিসি অফিসারেরা। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, বিমানের রেডিয়ো কমিউনিকেশন যন্ত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ায় পাইলট যোগাযোগ করতে পারেননি। ‘‘উড়ন্ত বিমানের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এটিসি-র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনা সাধারণত ঘটে না। তাই উদ্বেগ স্বাভাবিক,’’ বলেন এক এটিসি-কর্তা।