তছনছ দিঘা মোহনার মাছের বাজার। ছবি: কিংশুক আইচ
ঝড়-ঝঞ্ঝার পরে সরেছে কালো মেঘ। শুক্রবার সূর্যের মুখ দেখেছে বিপর্যস্ত উপকূল। তবে সম্বলহীন উপকূল এলাকার মৎস্যজীবীরা এখনও অন্ধকারে। তাঁদের ভিটে কেড়েছে সাগর, রুজির পথও আপাতত বন্ধ।
বুধবার ইয়াস আছড়ে পড়ার আগে সব কিছু ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। দু’দিন বাদে কিছুটা জল কমায় শুক্রবার দাদনপাত্রবাড় গ্রামে যান মৎস্যজীবী শেখ হাসিবুল। নিজের ঘরটুকু খুঁজেই পাননি। চারদিকে জলতরঙ্গের মাঝে দ্বীপের মতো জেগে শুধু গোটা কতক টালির ছাউনি। হাসিবুলের স্ত্রী বললেন, ‘‘কিছুই নেই। জমির কাগজপত্রও ভেসে গিয়েছে। এখন কোথায় ঘর বাঁধি দেখি!’’
উপকূলবর্তী কাঁথি মহকুমাতেই শুধু ৪২টি মৎস্যখটি রয়েছে। তবে যার জোরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করবেন, মৎস্যজীবীদের সেই রোজগারের পথও এখন বন্ধ। যে ট্রলারে সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতেন, তার বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত। নষ্ট হয়ে গিয়েছে মাছ ধরার লক্ষ লক্ষ টাকার জাল। মাছ ধরে এনে যে সব আড়তে বিক্রি করতেন, সে সবও ভেসে গিয়েছে। মৎস্যবন্দর থেকে মাছ নিলামকেন্দ্র— জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে সব ধ্বংসস্তূপ। মন্দারমণির মৎস্যজীবী শ্রীকান্ত খাটুয়া বলেন, ‘‘বাড়ি গিয়েছে। মাছ ধরার জাল, নৌকা সব গিয়েছে। সরকার থেকে খাবার পেলেও ভবিষ্যতে কী হবে! কিছু দিন বাদেই মাছ ধরার মরসুম। তখন কী করব?’’ পূর্ব মেদিনীপুরের বিপর্যস্ত উপকূল জুড়েই মৎস্যজীবীদের হাহাকার, এর পরে
কী হবে?
গত বছর আমপানে তছনছ হয়ে গিয়েছিল জেলার বিস্তীর্ণ উপকূল। এ বার ইয়াসের ক্ষত বহন করছে শঙ্করপুর, মন্দারমণি সংলগ্ন অরকবনিয়া, দাদনপাত্রবাড়, শৌলা, নিউ জলধা, চাঁদপুর, লছিমপুর, জামড়া, শ্যামপুরের মতো মৎস্যজীবীদের বহু গ্রাম। সর্বত্রই ঘরদোর গিলেছে সমুদ্র। গরু-ছাগল-মুরগি ভেসে গিয়েছে স্রোতে। এক বছরের ব্যবধানে এমন জোড়া ধাক্কায় রামনগর-১ ব্লকের গোবিন্দবসান, ধিতাইবসানের মতো একাধিক মৎস্যজীবী গ্রামের তছনছ দশা। দাদনপাত্রবাড় এবং নিউ জলধায় দীর্ঘ এলাকা জুড়ে সমুদ্র বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য বন্দর পেটুয়ার। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় মাছ ধরার ট্রলারগুলিকে বড় বড় কাছি দিয়ে বেঁধে রাখা ছিল। ঘর্ষণ লেগে যাতে ট্রলার ডুবে না-যায়, সে জন্য এক-একটি ট্রলারের মাঝখানে টায়ার লাগানো ছিল। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। ভেঙেচুরে গিয়েছে বহু ট্রলার। ডুবে গিয়েছে একটি ট্রলার। জলোচ্ছ্বাসের জল সরলেও গোটা মৎস্যবন্দর এখন পলিতে ভরে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। দিঘা মোহনার মাছ নিলাম কেন্দ্রও ঝড়-জলে চুরমার।
কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি লক্ষ্মীনারায়ণ জানা বলছিলেন, ‘‘কয়েক হাজার বাড়ি আংশিক এবং সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। মৎস্যজীবীদের ব্যবসা করার ছাউনিও ক্ষতিগ্রস্ত। বহু নৌকা এবং মাছ ধরার জাল ভেসে গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির একটা হিসেব আমরা মৎস্য দফতরকে দিয়েছি।’’
কিন্তু এই ক্ষতিপূরণ কদ্দিনে হবে? জবাব হাতড়াচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।