চলছে পুকুর খননের কাজ
সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরি নিয়ে এক সময় উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলার রাজ্য-রাজনীতি। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের ক্ষেত্রে অন্যতম অনুঘটকের কাজ করেছিল সিঙ্গুর জমি আন্দোলন। তার পর জল অনেক দূর গড়িয়েছে। কারখানা বন্ধ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চাষের জমি ফিরেও পেয়েছেন কৃষকেরা। এ বার সেই জমিরই একাংশে গড়ে উঠেছে মাছের ভেড়ি। যা নিয়ে আবার শুরু হল রাজনৈতিক তরজা। ফলে আবার রাজ্য-রাজনীতির আলোকবৃত্তে উঠে এল সিঙ্গুর।
২০০৬ সালে টাটার কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই জমি চাষের উপযুক্ত নয় বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন এলাকার চাষিদের একাংশ। সেই জমির অন্তর্গত সিঙ্গুরের গোপালনগর মৌজায় শুরু হয়েছে মাছের ভেড়ি তৈরির কাজ। এ ছাড়াও আশপাশে আরও কয়েকটি মাছের ভেড়ি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সরকারি তরফে। মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে শুরু হয়েছে পুকুর খনন। চাষিদের একাংশ বলছেন, জমি চাষের উপযুক্ত নয় বলেই মাছের ভেড়ি তৈরি করা হচ্ছে।
গোপালনগর মৌজার কৃষক বনমালী মাইতি বলেন, ‘‘স্বপ্ন ছিল, কারখানা হবে। সেটা তো হল না। তাই চেষ্টা করছি, যাতে এটা করে কিছু রোজগার করা যায়। সেই জন্যই মাছের ভেড়ি করার আবেদন করেছিলাম। সরকার অনুমতিও দিয়েছে।’’
সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধাড়া বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের আওতায় তিন বিঘার বেশি জমিতে পুকুর খনন করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে মাছ চাষ হবে। অন্য দিকে, সেই পুকুরের জল চাষের কাজেও লাগবে। নিচু এলাকায়, বিশেষত চাষের অযোগ্য জমিতে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। সরকার থেকে বিনামূল্যে পুকুর খনন করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তিন বছর চাষিদের বিনামূল্যে মাছ ও মাছের খাবার সরবরাহ করা হবে।’’
সিঙ্গুরের জমিতে মাছ চাষ করা নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা অধুনা কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘দিদিমনি সর্ষে ছুড়ে দিয়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, সর্ষের ভিতরেই ভুত রয়েছে। সিঙ্গুরের মানুষ খুব ভরসা করে ওঁর হাতে জমি ছেড়ে দিয়েছিল। এখন কারখানাও নেই, ব্যবসাও নেই। আগে যেখানে কাশফুল ফুটত, এখন কোনও চাষ হয় না। মানুষকে বোকা বানিয়ে দশ বছর চালিয়েছেন উনি। এ বার বদলা নেওয়ার সময় এসেছে।’’
পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানেন, দিলীপ ঘোষ একটা বদ্ধ পাগল। উনি যা বলেন, তাতে কেউ পাত্তা দেন না। সিঙ্গুরের মানুষ সব দেখছেন এবং দিদির উপর আস্থা রেখেছেন। দিলীপবাবু মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন।’’