Student Death at Jadavpur University

হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হল যাদবপুরের পড়ুয়ার, নেপথ্যে কোন কারণ, তদন্তে পুলিশ

বৃহস্পতিবার ভোরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের মৃত্যুকে ঘিরে ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য। তিনি হস্টেলের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, না কি এর নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৫৮
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বিতর্ক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। —ফাইল চিত্র।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য। পুলিশ সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের নাম স্বপ্নদীপ কুন্ডু (১৮)। বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। নদিয়ার হাঁসখালির বগুলা এলাকার বাসিন্দা স্বপ্নদীপ। হস্টেলের অন্য পড়ুয়াদের দাবি, বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁরা ভারী কিছু পড়ার শব্দ পান। তাঁরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন স্বপ্নদীপ। উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিকটবর্তী এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ সূত্রে এই খবর জানানো হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

বুধবার থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। স্বপ্নদীপ ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। বিভাগে ক্লাস করে যে তাঁর খুব ভাল লেগেছে, তা বাবা এবং মামাকে জানিয়েছিলেন। এর পর হঠাৎ বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটায় তাঁর মৃত্যু ঘিরে রহস্য ঘনিয়ে উঠেছে। তিনি হস্টেলের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, না কি এর নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে, তা তদন্তে নেমে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বাংলা বিভাগের শিক্ষক রাজ্যেশ্বর সিন্‌হার বক্তব্য, ‘‘এই মৃত্যু মর্মান্তিক। র‌্যাগিং হিসাবে বিষয়টিকে ধরে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিলম্বে এফআইআর করা উচিত। স্বপ্নদীপ নিজে ভালবেসে বাংলা পড়তে এসেছিল। ওর পড়তে ভাল লাগছিল। সে কথা ওর বাবাকে নিজেই জানিয়েছে। তার পর এই ঘটনা ঘটল কী করে?’’

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুণাল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যও বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। তাঁর দাবি, র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে স্বপ্নদীপ মারা গিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘একটি প্রথম বর্ষের ছাত্র র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে একটু আগে মারা গেছে। আমার মনে পড়ে, র‌্যাগিং সত্যিই ‘র‌্যাগিং’ কি না, সেটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দিয়ে ঠিক করতে হবে, এই কথা বলে প্যামফ্লেট প্রকাশ করে ঐ সব কাজের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে চাওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর পর নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা অনেকেই করবে।...’’

সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভাল লাগলেও হস্টেলে স্বপ্নদীপের কোনও সমস্যা হচ্ছিল। রাত দশটা নাগাদ বাবাকে ফোন করে তিনি বলেছিলেন তাঁকে নিয়ে যেতে। কুণাল চট্টোপাধ্যায়ের পোস্ট এবং রাজ্যেশ্বর সিন্‌হার বক্তব্যে স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আরও দানা বেঁধেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই মৃত্যু নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্র ফেডারেশনের তরফে প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। এর আগেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংয়ের মতো ঘটনা বহু বার ঘটেছে, তবুও কর্তৃপক্ষ কেন ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগী হননি, তার জবাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। হস্টেলের সুপার থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, আমরা এই ঘটনার স্বচ্ছ ও দ্রুত তদন্ত এবং সকল ছাত্রছাত্রীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। যত ক্ষণ না পর্যন্ত যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবে, যে বা যারা ছেলেটির মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের শাস্তি দেবার ব্যবস্থা না করবে তত ক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে…।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement