Madrasa

Madrasa Education: সম্প্রীতির দীপজ্বেলে মাদ্রাসার শীর্ষে দীপান্বিতা

এ রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষার ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য বাঁক।

Advertisement

ঋজু বসু

পলাশি শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪০
Share:

ফাইল ছবি

চুঁচুড়ার বাড়ি থেকে কিছু দূরে নদিয়ার পলাশির জানকীনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের মায়া এখনও কাটাতে পারেননি জীববিদ্যার শিক্ষিকা দীপান্বিতা পাল। মাদ্রাসার প্রাক্তনী মনস্তত্ত্ব বিদ্যার স্নাতকোত্তরের ছাত্রী শাওনি রিয়া বা এডুকেশনে এমফিল-রত ছাত্র মুস্তাকিনদের নানা জরুরি পরামর্শের জন্য ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগটাও অটুট। সেই শিক্ষিকা এ বার প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিচ্ছেন পাণ্ডুয়ার ঐতিহ্যবাহী সুলতানিয়া হাই মাদ্রাসায়।

Advertisement

মাঝখানে বছরখানেক পলাশি ছেড়ে পোলবার ইউএনবি হাই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন দীপান্বিতা। এ বার প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে তিনি যোগ দেবেন পাণ্ডুয়ায়। এ রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষার ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য বাঁক। এই প্রথম কোনও অমুসলিম মহিলা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা হচ্ছেন।

দীপান্বিতা একা নন। আরও অন্তত তিন জন— টুম্পা হালদার, দেবশ্রী কর্মকার এবং অনিতা তন্তুবায়ও যথাক্রমে পুরুলিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং পূর্ব বর্ধমানের তিনটি মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেবেন। মাদ্রাসা শব্দটির সঙ্গে দীর্ঘ কাল ধরেই এ রাজ্যেও জনমানসে কিছু ভুল ধারণার বসত। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকার পদে চার জন অমুসলিম মহিলার নিয়োগ সেটা মুছতে খানিকটা সাহায্য করবে বলে শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা শিবিরের ধারণা।

Advertisement

বাংলার মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণায় যুক্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নীলাঞ্জনা গুপ্ত বলেন, “এমনিতে সরকারি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম মাধ্যমিকের তুল্যমূল্য। ফারাক বলতে ইসলামি ইতিহাসের একটি বিষয় পড়তে হয়। বরং সাহিত্যের মতো কয়েকটি বিষয়ে মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে বৈচিত্র বেশি। কিন্তু মাদ্রাসা মানে যে স্কুল, সেটা শিক্ষিতেরাও অনেকে জানেন না। সব মাদ্রাসাই তাঁদের চোখে ধর্মীয় মৌলবাদের আখড়া। মাদ্রাসায় পড়ুয়া বা শিক্ষক হিসেবে অমুসলিমদের উপস্থিতি খুব কম নয়। অমুসলিম প্রধান শিক্ষিকাদের উপস্থিতিও ভুল ধারণা ভাঙতে সাহায্য করবে।”

রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তা আবিদ হুসেন বলেন, “রাজ্যে মাদ্রাসায় শিক্ষক বা ছাত্র কারও ক্ষেত্রেই ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। ছাত্র বা ছাত্রী এবং শিক্ষকের একটাই পরিচয়। তিনি ছাত্র বা ছাত্রী। তিনি শিক্ষক। এত দিন প্রধান শিক্ষকের পদে অমুসলিম পুরুষেরা মসৃণ ভাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। এ বার অমুসলিম মহিলারাও এলেন। পড়ুয়া বা স্কুল প্রশাসনের সঙ্গে কারও বোঝাপড়ায় সমস্যা নেই। এটা রাজ্যে সম্প্রীতির পরিবেশের লক্ষণ।”

নতুন প্রধান শিক্ষিকাদের মধ্যে টুম্পা হালদার মুর্শিদাবাদের কুমারপুর লেশারুদ্দিন হাই মাদ্রাসা থেকে পুরুলিয়ার পঞ্চগ্রামে ফতেডাঙা হাই মাদ্রাসায় যোগ দিচ্ছেন। বর্ধমান শহরের অনিতা তন্তুবায় ওই জেলায় সাহেবগঞ্জ হাই স্কুলে পড়াতেন। তিনি যোগ দিচ্ছেন বনদুটিয়া হাই মাদ্রাসায়। এবং মুর্শিদাবাদের চুয়াপুর বিদ্যানিকেতন গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা দেবশ্রী কর্মকার প্রধান শিক্ষিকা হয়ে যোগ দেবেন উত্তর দিনাজপুরের ভাটিনগ্রামের এমএনআই হাই মাদ্রাসায়। শেষ দু’জন সরকারি স্কুল থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছেন। দেবশ্রী বলেন, “স্কুল ও মাদ্রাসা, দু’‌টিই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ধর্মের গন্ধ খোঁজা অবান্তর। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উন্নততর করার চেষ্টা করব, এটাই আমার স্বপ্ন।”

দীপান্বিতা বা টুম্পা দীর্ঘদিন ভিন্‌ধর্মী ছাত্র, সহকর্মীদের কাছ থেকে দেখছেন। দীপান্বিতা বলেন, “মাদ্রাসার পরিবেশ নিয়ে আগে আমারও ভুল ধারণা ছিল। পরে দেখেছি, তা আর পাঁচটা স্কুলেরই মতো। প্রিয় সহকর্মী, ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই অমুসলিম। তাঁরা আত্মীয়ের মতো হয়ে উঠেছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement