‘পুত্র’ শুভেন্দুর সঙ্গে বিধানসভায় লড়তে তৈরি হচ্ছেন ‘নন্দীগ্রামের মা’

‘দাদার অনুগামী’-রা তাঁর সঙ্গে দল ছেড়ে গেলেও ‘মা’ রয়ে গিয়েছেন তৃণমূলেই। দলত্যাগের পর থেকেই পুত্রসম শুভেন্দুর সঙ্গে আর কথা হয়নি তাঁর।

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ১১:১৩
Share:

ফিরোজা বিবি এবং শুভেন্দু।

তিনি ‘নন্দীগ্রামের মা’। এবং তিনি বলছেন, ‘‘কুপুত্র থেকে নিপুত্র ভাল!’’ তাঁর কাছে এখন ‘কুপুত্র’ শুভেন্দু অধিকারী। গত ১৮ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দু। ‘দাদার অনুগামী’-রা তাঁর সঙ্গে দল ছেড়ে গেলেও ‘মা’ রয়ে গিয়েছেন তৃণমূলেই। দলত্যাগের পর থেকেই পুত্রসম শুভেন্দুর সঙ্গে আর কথা হয়নি তাঁর। তবে ললাটলিখন পড়েই ফেলেছেন এই বৃদ্ধা। শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই তাঁকে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের ময়দানে লড়াইয়ে নামতে হবে। অতএব কোনও পিছুটান না রেখে সন্তানহারা মা বলছেন, ‘‘কুপুত্র থেকে নিপুত্র ভালো।’’ আরও বলছেন, ‘‘লড়াইয়ে আমার ভূমিকা তো থাকবেই! আমি এক সন্তান হারিয়ে হাজার সন্তান পেয়েছি। তাই এক সন্তানের বিরুদ্ধে যদি আমাকে লড়তে হয় তো লড়ব! আমার অবস্থানে কোনও বদল হবে না।’’

Advertisement

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। সেই তালিকায় ছিলেন ফিরোজা বিবির পুত্র শেখ ইমদাদুল। পরে ২০০৯ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভার উপনির্বাচনে ‘শহিদের মা’ হিসেবে তাঁকেই প্রার্থী করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ছিল, বামফ্রন্ট প্রার্থী সিপিআই নেতা পরমানন্দ ভারতীর বিরুদ্ধে ফিরোজা প্রার্থী হলেও আসলে মেঘের অন্তরাল থেকে লড়াই করছেন ‘মেঘনাদ’ শুভেন্দুই। সেই উপ নির্বাচনে ৩৯,৪৫৯ ভোটে জয় পান নন্দীগ্রাম আন্দোলনে নিহত শহিদের মা। ২০০৯ সালের উপনির্বাচনের পর ২০১১ সালের ভোটেও নন্দীগ্রাম থেকেই বিধায়ক হয়েছিলেন ফিরোজা। রাজ্যের রাজনীতিতে তাঁর পরিচয় ‘নন্দীগ্রামের মা’ হিসাবেই।

পরে তাঁর জায়গাতেই নন্দীগ্রামে শুভেন্দুকে প্রার্থী করেন মমতা। বিনা বাক্যব্যয়ে দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে সরে যান ফিরোজা। তাঁকে প্রার্থী করা হয় পাঁশকুড়া-পূর্ব আসনে। সেই ভোটেও এই বৃদ্ধাকে জেতাতে বড় ভুমিকা নিয়েছিলেন শিশির অধিকারীর পুত্র শুভেন্দু। কিন্তু ভাগ্যচক্রে তাঁরা এখন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী! ২০১৬ সালে নন্দীগ্রাম আসন থেকে জিতে বিধানসভায় যান শুভেন্দু। রাজ্যের মন্ত্রীও হন। সম্প্রতি বিধায়কপদে ইস্তফা দেওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি নন্দীগ্রামেরই বিধায়ক ছিলেন। তাঁর পদত্যাগে আপাতত বিধায়কহীন ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিধায়ক পাওয়ার দিকে তাকিয়ে।

Advertisement

গত ১০-১২ বছরে শুভেন্দু-ফিরোজার সম্পর্ক ছিল মা-ছেলের মতোই। কিন্তু পুত্রসম শুভেন্দুর দলবদলে রুষ্ট হয়েছেন ‘মা’। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন ভোট ময়দানে লড়াইয়ের। তাঁর কথায়, ‘‘মুখের আস্ফালন দেখিয়ে লাভ নেই। সম্মুখসমরে দেখা হবে।’’ বিজেপি নেতাদের ভাষা ব্যবহারও নিয়েও বিস্তর আপত্তি রয়েছে তাঁর। ফিরোজা বলছেন, ‘‘বলা হচ্ছে খেরিয়া হঠাও, দেশ বাঁচাও। আমরা কি খেরিয়া? ওদের (শুভেন্দুর বর্তমান রাজনৈতিক দল) দলের লোকরাই তো এ সব বলে বেড়াচ্ছে!’’

দল যদি শুভেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে আগামী বিধানসভা ভোটে তাঁকে প্রার্থী করতে চায়? ফিরোজার বক্তব্য, ‘‘দল কী করবে না করবে সে বিষয়ে আমার মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে প্রয়োজনে লড়াই করতে হবে।’’ এবং সেই লড়াই প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘কে আমার সন্তান, কে বাপ, কে ভাই, কে ছেলে— এখন এসব দেখার সময় নেই। আমি দিদির সঙ্গেই আছি।’’ কিন্তু ২০১৬ সালে দলনেত্রীর নির্দেশে তমলুকের সাংসদ পদ ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হন শুভেন্দু। জিতে পরিবহণ-সহ রাজ্যের তিনটি দফতরের মন্ত্রী হন তিনি। তার পর কালক্রমে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর ক্রমবর্ধমান দূরত্ব এবং শেষমেশ দলত্যাগ। এখন দেখার, ফিরোজাৃ-শুভেন্দুর মুখোমুখি লড়াই হলে আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম কার পাশে থাকে। মা? নাকি ছেলে?

আরও পড়ুন: ‘ওঁর সঙ্গে আমার যা সম্পর্ক, তাতে বহু বছর আগে আমাদের পাশে থাকার কথা বলতেই পারতাম’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement