সিউড়ির অনুষ্ঠানে ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র।
বীরভূমের ডেউচা নিয়ে অনুষ্ঠানেও এল হুগলির সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ। আনলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। শনিবার ডেউচা-পাঁচামির প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্পে জমিদাতাদের সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই ফিরহাদ বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে আন্দোলন টাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল না। সেই আন্দোলন ছিল মানুষের অধিকারের আন্দোলন।’’ তাঁর এই দাবিকে অবশ্য কটাক্ষ করেছে বাম-বিজেপি।
এর আগে দু’দফায় খনি প্রকল্প এলাকায় জমিদাতাদের চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এ দিন ফের ২৩৮ জনকে গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় সিউড়ির রবীন্দ্র সদনের মঞ্চ থেকে। ফিরহাদ ছাড়াও ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়, পিডিসিএলের এমডি পিবি সেলিম, জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। সেখানেই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ টেনে ফিরহাদ বলেন, ‘‘ডেউচা পাঁচামি করতে গিয়ে এখানে তাপসী মালিক করতে হয়নি। সিঙ্গুর করতে হয়নি। নন্দীগ্রামের মতো গুলি চালাতে হয়নি।’’ এর পরে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘ষড়যন্ত্র করা হয়। যেন মনে হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাটাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। না। মমতা চেয়েছিলেন গরিব মানুষের জমি তাঁদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে নেওয়া যাবে না। স্বেচ্ছায় যদি মানুষ জমি দেন, সেই জমিতে প্রকল্প করুন। যেটা ডেউচায় হচ্ছে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘মিথ্যা বলে লাভ নেই। সিঙ্গুর নিয়ে মমতা প্রথম দিন যা বলেছিলেন, পরের দিন তার উল্টো কথা বলেছেন। নন্দীগ্রামে কী হয়েছে, সেটা এক সময় ওঁদের দলে থাকা শুভেন্দু অধিকারীই বলেছেন।’’
বস্তুত, ডেউচার প্রস্তাবিত খনি প্রকল্পে যে জোর করে জমি নেওয়া হবে না, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই প্রথম দিকে একাধিক বার বিরোধের মুখে পড়লেও প্রশাসন ধীরে ধীরে বাসিন্দাদের বোঝানোর কাজ চালিয়ে গিয়েছে। আপাতত, দ্বিতীয় দফায় সমীক্ষার কাজ এগোচ্ছে মসৃণ ভাবেই। প্রস্তাবিত এলাকার জমিদাতাদের ৫৭৬ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এ দিন শুধু ২৩৮ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়াই নয়, যে সব পরিবারে চাকরি করার মতো কেউ নেই বা সন্তান নাবালক, তেমন ৫৪টি পরিবারকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতার চেকও দেওয়া হয়। এ দিন তো বটেই, সম্প্রতি ডেউচায় বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। তবে খনি বিরোধী মহাসভার আহ্বায়ক গণেশ কিস্কু দাবি করেছেন, ‘‘কিছু লোককে চাকরির দিলেও আন্দোলনে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’
দুপুরে ফিরহাদের কর্মসূচির পরে সন্ধ্যায় সিউড়িতে এসে ডেউচা প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘প্রচারে থাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তাজপুর বন্দর ও ডেউচা পাঁচামিকে বড় সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে মাঝে মাঝে কিছু অভাবী লোকজনকে ডেকে চুক্তিভিত্তিক চাকরি দিচ্ছেন। ১০ হাজার কি ৯ হাজার টাকার এই চাকরিগুলির কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’’ ফিরহাদের আসা নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ভাইপো আমেরিকায়, কেষ্ট (অনুব্রত) মণ্ডল জেলে, সেহগাল দিল্লির পথে। আরও কত জনকে দিল্লি যেতে হবে! তাই ক্ষয়িষ্ণু তৃণমূলকে বাঁচাতে হেলিকপ্টারে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল।’’