ফিরহাদ হাকিম।
‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি মেনে দলের একাংশের আপত্তিতে কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে তাঁর ফিরে আসা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এমনকি এ-ও শোনা গিয়েছিল, ওই নীতিতে কলকাতা পুরভোটের টিকিট-ই হয়তো পাবেন না তিনি। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠান ‘অ-জানা কথা’য় ওই দাবি উড়িয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ওরফে ববি হাকিম জানালেন, তাঁর কলকাতার মেয়র হওয়া না নিয়ে দলে কোনও আপত্তি ছিল না। অন্তত তাঁর এমনটা মনে হয় না।
মেয়র পদে ববির প্রত্যাবর্তন নিয়ে দলের অন্দরে ও বাইরে জল্পনার মাঝেই পুরভোটের প্রার্থিতালিকায় ফিরহাদের নাম ঘোষণা করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে তৃণমূলের অন্দরে তো বটেই, শহরের মানুষও জানতেন, মেয়র পদের দৌড়ে ববিই এগিয়ে আছেন। পুরভোটের ফলপ্রকাশের দিনই মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয় বার কলকাতার মহানাগরিক হতে চলেছেন ববি। হলেন-ও। দলের সর্বময় নেত্রীর উপস্থিতিতেই মেয়র হয়েছেন ববি।
এ নিয়েই শনিবারের সান্ধ্য-আড্ডায় ববি বলেন, ‘‘আমি কোনও দিন মমতা’দির কাছে মুখ ফুটে কিছু চাইনি। কোনও দিন বলিনি, আমায় মেয়র করে দাও বা আমায় বিধায়ক করে দাও। মমতা’দি আমায় সব দিয়েছেন। আমরা শৃঙ্খলাপরায়ণ দল। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত নেন মমতা’দিই। মমতা’দি চেয়েছেন তাই আমি মেয়র হয়েছি।’’ তাঁর মেয়র হওয়া নিয়ে দলের অন্দরে মতপার্থক্য ছিল কি না, এই প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না কোনও মতপার্থক্য ছিল।’’
বস্তুত, গত বছর ডিসেম্বরে কলকাতা পুরভোটের ফলপ্রকাশের পর মহারাষ্ট্র নিবাসে দলের বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী মেয়র পদে ববির নাম প্রস্তাব করার পর মমতা যখন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কারও কোনও আপত্তি আছে?’’ তখন কোনও আপত্তি আসেনি। উল্টে সুব্রত বলেছিলেন, ‘‘আপনি বলে দিলে কে আর আপত্তি করবে!’’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে কলকাতার মেয়র পদ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় সরে দাঁড়ানোর পর ববিকে মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি কলকাতার মহানাগরিকের দায়িত্ব দেন মমতা। যে কারণে বিধানসভায় পুর আইনের সংশোধনও করতে হয়েছিল সরকারকে। এর পর আরও এক বার কলকাতার মেয়র পদে ববির উপরেই আস্থা রাখলেন দলনেত্রী। দ্বিতীয় বার মেয়র হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর ফিরহাদ বলেছিলেন, নেত্রীই আরও একবার তাঁর উপর আস্থা রেখেছেন, আর সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে তিনি জীবন দিতেও পিছপা হবেন না। উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্র নিবাসের এই দলীয় বৈঠকে সে দিন উপস্থিত ছিলেন না দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরভোটের সময় তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, অভিষেকের ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনেই ববি, অতীন ঘোষ, মালা রায়দের টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রাথমিক ভাবে। কিন্তু স্বয়ং নেত্রীর হস্তক্ষেপেই পুরভোটে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দল।
আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠানে ববি বলেন, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা আমাদের সবাইকেই মেনে চলতে হবে। আর এই দলের নির্দেশক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যা বলেন, ভালর জন্যই বলেন। তাই ছোট থেকে আমরা কখনও তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি।’’
কিন্তু দলনেত্রী কি নিজে চাইছেন দলে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি চালু হোক? এই প্রশ্নের জবাবে ববি শুধু বলেন, ‘‘এমনটা আমি কখনও শুনিনি।’’