রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা হবে ‘রাজনৈতিক খেলা’র, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। —ফাইল চিত্র।
দলের এক ডজন নেতার বিরুদ্ধে সিবিআই এফআইআর করতেই রাজনৈতিক অভিসন্ধির দিকে ইঙ্গিত করতে শুরু করল তৃণমূল। রাজনৈতিক ভাবেই এই ‘রাজনৈতিক খেলা’র মোকাবিলা করা হবে— প্রতিক্রিয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কোন সময়ে এই এফআইআর হল, সেটা মাথায় রাখতে হবে।’’ উচ্ছ্বসিত বিজেপি স্বাগত জানাল সিবিআই-এর এই পদক্ষেপকে। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর কটাক্ষ, তৃণমূল হল আলিবাবা আর চল্লিশ চোরের দল। অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের, অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছে বামেরা।
এক সঙ্গে ১২ জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর হল। ছ’জন সাংসদ, চার জন মন্ত্রী, এক জন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং এক জন বিধায়ক অভিযুক্ত। এমন গণ-এফআইআর-এর খবর আসায় স্বাভাবিক ভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর প্রতিক্রিয়া আসতে তাই খুব দেরি হয়নি। সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘এফআইআর দায়ের হলেই দোষ প্রমাণ হয়ে যায় না। এটা রাজনৈতিক খেলা। রাজনৈতিক ভাবেই আমরা এর মোকাবিলা করব।’’ নারদ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী কিন্তু রাজনৈতিক লড়াইয়ের কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা। এই সব ফুটেজ দেখিয়েও মানুষকে আমাদের থেকে দূরে সরানো যায়নি। আমরা প্রত্যেকেই বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হয়েছি। অর্থাৎ মানুষ বুঝেছেন, এটা দুর্নীতি নয়, এটা ষড়যন্ত্র। আইনি পথেই আমরা এর মোকাবিলা করব।’’ তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইঙ্গিতও রাজনৈতিক অভিসন্ধির দিকেই। তিনি বলেছেন, ‘‘এই এফআইআর-কে সাদামাটা চোখে দেখলে চলবে না। যে সময়টায় এই এফআইআর হল, সেই সময়টার কথাও মাথায় রাখতে হবে।’’ দলের মধ্যে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে বলে পার্থবাবু জানিয়েছেন।
সিবিআই-এর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি বললেন, এই এফআইআর কাঙ্ক্ষিতই ছিল। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এটা আকাঙ্ক্ষিতই ছিল। সারা বাংলার মানুষ সিবিআই-এর দিকে তাকিয়ে ছিল। আমরাও রাস্তায় নেমেছিলাম, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছিলাম।’’ দিলীপ ঘোষ আরও বলেছেন, ‘‘সিবিআই-এর উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। তদন্ত সঠিক পথেই এগোবে বলে আমরা আশ্বস্ত।’’
আরও পড়ুন: নারদ-ফুটেজে থাকা প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, ‘‘আপনি বলেছিলেন নারদ নিউজের সব ছবি জাল। আপনি আজ কী বলবেন? সারা বাংলার মানুষ বুঝেছিলেন, তৃণমূলের নেতারা ঘুষ নিয়েছেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অস্বীকার করেছিলেন।’’ অধীর আরও বলেন, ‘‘তৃণমূল আলিবাবা-চল্লিশ চোরের দল। তৃণমূলের নেতারা ভারতের রাজনীতিতে বাংলাকে কলঙ্কিত করে দিলেন, কলুষিত করে দিলেন।’’
যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক তথা বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, সিবিআই-এর এই পদক্ষেপ আসলে বামেদেরই সাফল্য। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা গোড়া থেকে দাবি জানিয়ে আসছিলাম, ওঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। সিবিআই প্রাথমিক তদন্তে অপরাধমূলক কিছু তথ্য পেয়েছে বলেই এফাইআর দায়ের করেছে। আমাদের দাবি ও আন্দোলনের এটা প্রাথমিক সাফল্য।’’ তবে তদন্ত প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সুজনবাবু বলেছেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’ সব অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীকে অবিলম্বে পদ থেকে বরখাস্ত করা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর, দাবি সুজনের। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘অভিযুক্তদের যদি বরখাস্ত না করেন, তা হলে মানুষ বুঝবেন যে এই কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীও এক জন সুবিধাভাগী। তাই তিনি অপরাধীদের মাথায় তিনি ছাতা ধরছেন।’’