ছবি: সংগৃহীত।
কোথাও দফতরকে না-জানিয়েই শ’য়ে শ’য়ে লোক নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। কোথাও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় মেটানো হয়েছে পুর চেয়ারম্যানের গাড়ির বিল। কোথাও আবার কাউন্সিলরদের শখ-আহ্লাদ মেটাতে রাজ্যের দেওয়া অনুদানে হাত পড়েছে। পানীয় জলের বরাদ্দে গাড়ি কিনেছেন কেউ, কেউ গরিব ভাতার টাকায় অফিস সাজিয়েছেন। রাজ্যের ১২১টি পুরসভার এমন সব কীর্তিকলাপ দেখে পুর চেয়ারম্যানদের আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নিল পুর দফতর। কলকাতা-সহ ছ’টি কর্পোরেশনের মেয়রদের আর্থিক ক্ষমতা খর্ব করার ব্যাপারেও অর্থ দফতরের সঙ্গে পুরকর্তাদের আলোচনা চলছে বলে খবর।
গত বুধবার পুরসভাগুলিতে পাঠানো পুর দফতরের নোটিসে বলা হয়েছে, পুরসভার চেয়ারম্যান আর পুরসভার কোনও চেক সই করার অধিকারী থাকবেন না। এখন থেকে যুগ্ম ভাবে চেক সই করবেন পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার এবং ফিনান্স অফিসার। কোনও পুরসভায় ফিনান্স অফিসার না-থাকলে স্থানীয় ট্রেজারি অফিসারদের কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।
পাশাপাশি বলা হয়েছে, অর্থ দফতরের স্থানীয় ট্রেজারির সঙ্গে পুর দফতরের যে অ্যাকাউন্টটি সংযুক্ত রয়েছে, শুধু সেটিতেই রাজ্য বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সমস্ত টাকা রাখা থাকবে। কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পে যদি আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলার শর্ত থাকে, তা হলে সেখানে প্রকল্পভিত্তিক টাকা জমা থাকবে। এ ছাড়া, পুরসভার একটি মাত্র নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকবে, যেখানে সমস্ত ধরনের কর বা কর বহির্ভূত রোজগারের টাকা জমা থাকবে। এর বাইরে সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে হবে। এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা সরানো যাবে না।
আরও পড়ুন: কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে: দিলীপ
নবান্নের এই সিদ্ধান্তে খুশি নন অধিকাংশ পুরসভার চেয়ারম্যান। দক্ষিণবঙ্গের এক পুর চেয়ারম্যানের দাবি, ‘‘এতে উন্নয়নের গতি কমে যাবে। আমলারা কোনও উন্নয়নমূলক কাজের খরচে চট করে সিলমোহর দিতে চাইবেন না। ফলে টাকা খরচ হবে না।’’ উত্তরবঙ্গের এক পুর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় নির্বাচিত প্রশাসনের নীতির সঙ্গে খাপ খায় না। স্থানীয় প্রশাসনকে সচল রাখতে আমলাতন্ত্রের ধরাছোঁয়ার বাইরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে খরচের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।’’ এক শীর্ষ পুরকর্তার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন পুরসভা থেকে যে সব অভিযোগ এসেছে, তা প্রকাশ্যে এলে জনপ্রতিনিধিদের সম্মান থাকবে না।’’ কী ভাবে চলত পুরসভার খরচ?
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, পুরসভাগুলির প্রবণতা ছিল স্থানীয় ভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে ‘নিজস্ব তহবিলে’র মোড়কে যাবতীয় টাকা ঢেলে দেওয়া। রাজ্যের অনুদান, কেন্দ্রীয় অনুদান, করের টাকা, প্রকল্পের টাকা— সবই ওই সব অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। তার পর সেখান থেকে অনুমোদনহীন কর্মীদের বেতন-সহ নানা খরচ করা হত। অথচ যে খাতে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে খরচ হত না। যে হেতু চেয়ারম্যানদের হাতেই চেক সই করার অধিকার ছিল, ফলে আমলাদের কিছুই করার ছিল না।