অভিযুক্ত শেখ হজরত ও আব্দুল হোসেন। বুধবার ইসলামপুর আদালতে। পুলিশ সূত্রে পাওয়া সিসি টিভির ছবি।
পুলিশের গুলিতে নিহত সাজ্জাক আলমের (২৫) দেহ নিতে প্রথমে অস্বীকার করলেন তার আত্মীয়েরা। পরে পুলিশ বুঝিয়ে দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেয়। রবিবার রায়গঞ্জ মেডিক্যালের মর্গে গোয়ালপোখর ও রায়গঞ্জ থানার পুলিশকর্তাদের নজরদারিতে তিন চিকিৎসকের বোর্ড ময়না তদন্ত করে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়। সন্ধ্যায় দেহ নিয়ে যাওয়া হয় করণদিঘির ছোট সোহারে সাজ্জাকের বাড়িতে। রাতে দেহ কবরস্থ করা হয়। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার বলেন, ‘‘পরিবার প্রথমে দেহ নিতে না চাইলেও, পরে বুঝিয়ে দেহদেওয়া হয়।’’
গত বুধবার গোয়ালপোখরের ইকরচালায় পুলিশকে গুলি করার পরে সাজ্জাককে মোটরবাইকে পালাতে সাহায্য করা ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে এ দিনই সকালে শেখ হজরত নামে এক জনকে গোয়ালপোখরের গরুলভাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রায়গঞ্জ মেডিক্যাল সূত্রের খবর, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, সাজ্জাকের বুকের বাঁ-দিকে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে বার হয়ে যায় গুলি। বাঁ-পায়ের হাঁটুতেও গুলির খোল মিলেছে, ঘাড়ে গুলির আঘাতের চিহ্ন থাকলেও খোল মেলেনি। পুলিশ সূত্রে দাবি, সাজ্জাকের পা থেকে উদ্ধার হওয়া গুলির খোলের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিন ময়না তদন্ত-পর্বে হাজির ছিলেন সাজ্জাকের প্রথম পক্ষের স্ত্রী আফরোজা খাতুন, ভাই খরতুজ আলম, দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মুসকান বিবি, শাশুড়ি সাবাতুন বেগম ও ভগ্নিপতি তফিজুল হক। আফরোজা বলেন, ‘‘আমার স্বামী ভুলের শাস্তি পেয়েছে। আফশোস নেই।’’ সাবাতুন বলেন, ‘‘সাজ্জাক আমার মেয়ে মুসকানকে খুনের হুমকি দিয়েছিল। ও পুলিশকে গুলি করার পরে আমরা আতঙ্কে থানায় আশ্রয় নিই।’’ এ দিকে, সাজ্জাককে সহযোগিতা করার অভিযোগে ধৃত শেখ হজরতকে রবিবার ইসলামপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় ভাওয়ালের দাবি, ইসলামপুর আদালতে আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত আব্দুল হোসেনকে অন্য কোনও জায়গায় হজরতই অস্ত্র সরবরাহ করেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ঘটনার দিন নজর-ক্যামেরার ছবিতে হজরতকে ওই আদালতে দেখা গিয়েছে বলেও দাবি। আব্দুলের খোঁজ চলছে বলে জানান ইসলামপুরের পুলিশ জেলার সুপার জবি টমাস।
গত শনিবার গোয়ালপোখরের কীচকটোলা সেতুর নিচে পুলিশের গুলিতে মারা যায় খুনের মামলায় বিচারাধীন সাজ্জাক। গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে নানা প্রশ্নও ওঠে। তার আগে বুধবার ইসলামপুর আদালত থেকে পুলিশের বাসে রায়গঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে যাওয়ার পথে ইকরচালায় দুই পুলিশকর্মীকে গুলি করে পালিয়েছিল সাজ্জাক।