Fatwa

ক্যারমে হাজার, লটারির জরিমানা সাতহাজারি

নিয়মের অন্যথা হলে শাস্তি এবং জরিমানা দুই-ই যে অনিবার্য, গ্রামের বটতলা থেকে মুদির দোকানের দেওয়ালে চোখ ফেরালেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে সে ফতোয়া।

Advertisement

জীবন সরকার ও বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৪:১১
Share:

একুশে আইন: সেই ফতোয়া-পোস্টার।

বৃষ্টিতে ফুলে-ফেঁপে ওঠা বাঁশলই নদী পরিখার মতো ঘিরে রেখেছে গ্রাম। তার উপরে খান দুয়েক নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া অদ্বৈতনগরের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগসূত্র টিকিয়ে রাখা সেই আধ-ভাঙা সাঁকো পার হয়ে পুলিশ-প্রশাসনের আনাগোনা থমকে গিয়েছে কবেই। মাতব্বরেরা তাই প্রান্তিক সেই বসতের নিয়ম-নীতি বেঁধে নিয়েছেন নিজেরাই। টিভি দেখা, ক্যারম খেলা বা মোবাইলে গান শোনা— মাতব্বরদের অনুশাসনে অদ্বৈতনগরে এক্কেবারে নৈব নৈব চ!

Advertisement

নিয়মের অন্যথা হলে শাস্তি এবং জরিমানা দুই-ই যে অনিবার্য, গ্রামের বটতলা থেকে মুদির দোকানের দেওয়ালে চোখ ফেরালেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে সে ফতোয়া। ছেলে-ছোকরার ক্যারম খেলা থেকে মোবাইলে গান শোনা, টিভি দেখা থেকে লটারির টিকিট কেনা কিংবা মদ-গাঁজার নেশা থেকে কম্পিউটার গেম-এ ঝুঁকে থাকা— এক বন্ধনীতে রেখে গ্রামের সমাজ সংস্কার কমিটির মাথারা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এমন সমাজ-গর্হিত কাজ কাউকে করতে দেখলে খবর দিন, তা হলে পুরস্কারও বাঁধা!’

মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের হদ্দ প্রান্তিক এলাকার ওই জনপদে মদ-গাঁজা-জুয়ার বাড়বাড়ন্ত অবশ্য নতুন নয়। ‘‘তা বলে আইনের তোয়াক্কা না করে মাতব্বরেরা নিজেরাই তালিবানি আইন চালু করবেন,’’ প্রশ্নটা সন্তর্পণে রাখছেন অদ্বৈতনগরের এক স্কুল শিক্ষক। গ্রামের প্রবীণ এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘এমন আইন তো সংস্কারে ঢেকে ফেলবে আস্ত গ্রামটাকে!’’

Advertisement

কমিটির সম্পাদক আজহারুল শেখ অবশ্য অন্যায্য কিছু দেখছেন না। চেয়ারে হাঁটু মুড়ে বসে তাঁর নিদান, ‘‘ঘোর অনাচার। আপনি জানেন না, সমাজকে অপরাধমুক্ত এবং সুস্থ রাখতে এ ছাড়া উপায় নেই!’’ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘অনাচার রুখতেই ক্যারম খেলা, টিভিতে অপসংস্কৃতি দেখা, মোবাইলে গান শোনার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি।’’

স্থানীয় ভাসাইপাইকর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আব্দুর রউফও কমিটির শাসনে তেমন ‘অন্যায়’ দেখছেন না। এ ব্যাপারে ঠারেঠোরে একটা ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন তিনি, ‘‘মদ-গাঁজার উপরে ফতোয়া জারি করা তো জরুরি বটেই, গ্রামের ছেলেপুলেরা পড়াশোনা ছেড়ে ক্যারম আর মোবাইলে বড্ড মেতেছে। সে সব রোখাও বড্ড জরুরি হয়ে উঠেছে। কমিটি তো ভাল করছে।’’

এমন একুশে আইনের খবর শুনে অবশ্য চমকে উঠেছেন শমসেরগঞ্জের বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তী— ‘‘আইন নিজে হাতে তুলে নেওয়াটা আরও বড় অপরাধ। এ নিয়ে তো অন্য অশান্তি ছড়াবে!’’ বেজায় চটেছেন জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ওয়াই রঘুবংশী। তিনি বলেন, ‘‘আইন নিজের মতো প্রণয়ন করা যায় না। কেউ তা করলে পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, গ্রেফতার করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement