প্রতীকী ছবি।
টোল প্লাজ়ায় গাড়ির জট কাটাতে মাস দুয়েক আগে চালু হয়েছে ‘ফাস্ট্যাগ’। কিন্তু সাধারণ যাত্রী ও গাড়িচালকদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, সমস্যা মেটা তো দূরের কথা, তার বদলে যানজটে নাভিশ্বাস উঠছে তাঁদের।
পরিস্থিতি ঠিক কেমন? সপ্তাহান্তে শান্তিনিকেতন থেকে গাড়িতে কলকাতায় ফিরছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সৌভিক বর্মণ। বেলা ৩টে নাগাদ রওনা হয়ে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ডানকুনি টোল প্লাজ়ায় পৌঁছনোর পরে গাড়ি যেন আর নড়ে না। ডানকুনি থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে কলকাতায় পৌঁছতে লেগেছে আরও আড়াই ঘণ্টা।
কলকাতা থেকে কোলাঘাট হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে যাওয়া যানবাহনেরও একই অবস্থা। মাসখানেক ধরে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের অভিজ্ঞতা, দুর্গাপুর, বর্ধমান, হলদিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দিঘাগামী বাস সময়ে চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিরতি পথে প্রায়ই নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে পৌঁছচ্ছে বাস। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে ন্যূনতম বিশ্রাম না-নিয়েই ফের বাস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে চালকদের। নিগমের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের সব বাসে ফাস্ট্যাগ থাকলেও টোল প্লাজ়ায় যন্ত্র সব সময় ঠিকমতো কাজ করে না। অযথা দেরি হয়।’’
বাবুঘাট থেকে আন্তর্রাজ্য পরিবহণের দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি এমনই জটিল। টোল প্লাজ়ায় অনেকটা সময় নষ্ট হওয়ায় বাসের এক বার যাত্রা সম্পূর্ণ করতেই ৩-৪ ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে।
প্রায় সব সরকারি বাসে ফাস্ট্যাগ থাকা সত্ত্বেও টোল প্লাজ়ায় যানজট এড়ানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। দু’নম্বর জাতীয় সড়কে ডানকুনি এবং পালসিট টোল প্লাজ়া ছাড়াও কলকাতা-মুম্বই ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে ধূলাগড়ি টোল প্লাজ়ায় একই অবস্থা। হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে তমলুকের কাছে সোনাপেত্যা টোল প্লাজ়ায় সন্ধ্যা নামলেই গাড়ির ভিড় উচচে পড়ে। খড়্গপুর মহকুমা এলাকার মধ্যে দু’টি টোল প্লাজ়া ডেবরা, মকরামপুরও ব্যতিক্রম নয়।
ফাস্ট্যাগ নেই, এমন গাড়ির জন্য নির্ধারিত লেনে গাড়ির ভিড় প্রায়ই অন্যান্য লেনে সমস্যা তৈরি করছে বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগী যাত্রী এবং ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের অভিজ্ঞতা, যানজট সামলাতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের তৎপরতা সব সময় চোখে পড়ে না।
ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশেনর যুগ্ম সম্পাদক সজল ঘোষ জানান, নগদ লেনদেনের জন্য টোল প্লাজ়াগুলির দু’প্রান্তে মাত্র একটি করে লেন খোলা থাকছে। সেখানে গাড়ির অস্বাভাবিক ভিড় হচ্ছে। নগদ লেনদেন ব্যবস্থায় পরিস্থিতি এত জটিল ছিল না বলে জানান বাসচালক এবং নিত্যযাত্রীদের একাংশ।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই সব অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের অভিযোগ, অনেকে ফাস্ট্যাগ নিলেও তা সময়মতো রিচার্জ করেন না। ফলে টোল প্লাজ়ায় সমস্যায় পড়তে হয়। ব্যাঙ্কগুলি যথেচ্ছ ফাস্ট্যাগ বিক্রি করলেও প্রায়ই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থার সঙ্গে নতুন ফাস্ট্যাগের ম্যাপিংয়ের (চিহ্নিতকরণ ও সমন্বয়) কাজ ঠিকমতো করছে না। ফলে গাড়ি চিহ্নিত করার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না। ডানকুনি টোল প্লাজ়ায় যানজটের জন্য টালা সেতুর বিপর্যয়কেও দুষছেন তাঁরা। এর জন্য কলকাতামুখী গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হচ্ছে। সমস্যা মেটাতে বৈঠক করছে হাওড়া ও হুগলির জেলা প্রশাসন।
বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের সীমানায় দু’নম্বর জাতীয় সড়কের একটি অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার সুমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দূরপাল্লার গাড়ি একাধিক টোল প্লাজ়া দিয়ে যায়। সেগুলিকে নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। তুলনায় স্থানীয় গাড়ি নিয়ে সমস্যা বেশি। ফাস্ট্যাগ ব্যবহার না-করার প্রবণতা বেশি সেখানেই। ওই সব গাড়ির চালকদের আরও সচেতন এবং উদ্যোগী করে তোলা প্রয়োজন। ফাস্ট্যাগ ব্যবহারে জোর দিতেই টোল প্লাজ়াগুলিতে মাত্র একটি করে নগদ লেনদেনের লেন রাখা হয়েছে।’’