চক্ষুদান করল বাঘের হানায় নিহত মৎস্যজীবীর পরিবার। — নিজস্ব চিত্র
সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের হামলায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার দেউলবাড়ির বাসিন্দা শঙ্কর সর্দার। মঙ্গলবার এসএসকেএম-এ মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত শঙ্করের চোখ দান করে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেছে তাঁর পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার তিন সঙ্গীকে নিয়ে নৌকায় করে মাছ এবং কাঁকড়া ধরার জন্য জঙ্গলে গিয়েছিলেন শঙ্কর। সোমবার বিকেলে বেণীফেলির জঙ্গল লাগোয়া খাঁড়িতে মাছ এবং কাঁকড়া ধরার সময় আচমকা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাঘ। কিন্তু সঙ্গীরা পাল্টা আঘাত করায় বাঘ তাঁকে ছেড়ে জঙ্গলে চলে যায় বাঘ। এর পর শঙ্করকে প্রথমে কুলতলি-জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় শঙ্করের।
সব শেষ হয়ে গিয়েছে— শঙ্করের মৃত্যুর পর এমনটাই ভেবেছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু শঙ্করকে পুনর্জীবন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই। তাঁর চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের সদস্যরা। বাঘের হামলায় নিহতদের কেউ অঙ্গদান করেছেন, এমন নজির নেই। সেই উদাহরণই তৈরি করল তাঁর পরিবার।
রিজিওনাল অর্গান এ্যান্ড টিস্যু ট্র্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশনের যুগ্ম অধিকর্তা অর্পিতা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘বাঘের আক্রমণে নিহত কেউ আগে অঙ্গদান করেননি। নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় পদক্ষেপ। মৃতের পরিবার অঙ্গদানে এগিয়ে এসেছেন। এ জন্য ওঁদের ধন্যবাদ জানাই। অঙ্গ বা কলা (টিস্যু) দান একটা মহৎ কাজ। সেই কাজ ওঁরা করে দেখালেন। শঙ্করের মৃত্যু অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু মৃতের পরিবারের সিদ্ধান্তের জন্য কেউ দৃষ্টি ফিরে পাবেন। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে।’’
যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এই চক্ষুদান তার সদস্য সমরেন্দু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা বুঝিয়েছিলাম যে ওঁর চোখ দিয়ে অনেকে দেখতে পাবেন। ওঁর শ্বশুরকে আমরা সে কথা বলি। আমাদের কথায় ওঁরা রাজি হয়েছেন। শঙ্করের চোখ দিয়ে এখন অনেকে দেখতে পাবেন।’’
শঙ্করের শ্বশুর রামপ্রসাদ বাগানি পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জামাই আর ফিরবে না জানি। তবে ওর চোখ দান করায় অনেকে দৃষ্টি ফিরে পাবে। এ ভাবেই ও আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।’’
স্ত্রী এবং তিন সন্তান রয়েছে শঙ্করের। স্ত্রী মনসা সর্দারের কথায়, ‘‘পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেই জঙ্গলে গিয়েছিল আমার স্বামী। কিন্তু বাঘের মুখে পড়ে তার মৃত্যু হল। তবে তার চোখের সাহায্য নিয়ে যাতে অন্য মানুষ দৃষ্টি ফিরে পায় তাই মরণোত্তর চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নিই।’’