অপ্রতিম ঘোষ
দুর্গাপুজোর সময়েই সকলে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু কিডনি-যকৃৎ দিতে রাজি হলেও মৃত্যুপথযাত্রী ছেলের হৃৎপিণ্ড দান করতে চাননি মা। আগের চার বারের মতো পঞ্চম বারেও হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন মেদিনীপুরের বাসিন্দা বছর একুশের গণেশ কুইল্যা।
বছর একত্রিশের একমাত্র ছেলে তারক ডোমকে বাঁচাতে কিডনি দিতে রাজি ছিলেন মা শান্তা ডোম। কিন্তু তা সম্ভব না-হওয়ায় দু’বছর ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল হাওড়ার পরিবারটি।
বছর আটচল্লিশের স্বরূপ পালের যকৃৎ প্রতিস্থাপনের খরচ ৩০ লক্ষ টাকা শুনে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী চন্দ্রাণী দে পাল।কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় ছিলেন এক জওয়ানও।
আরও পড়ুন: হিংসার বিরুদ্ধে ছিল বলেই খুন: শাবানা
অঙ্গদানের মাধ্যমে মঙ্গলবার চার পরিবারকে এক সুতোয় বাঁধলেন সন্তোষপুরের ৪২ বছরের যুবক অপ্রতিম ঘোষ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে কোমায় চলে যান তিনি। রবিবার সন্ধ্যায় পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর ‘ব্রেন স্টেম ডেথ’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এ দিন এসএসকেএমে অপ্রতিমের হৃৎপিণ্ড গণেশের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। তাঁর একটি কিডনি পান হাওড়ার মল্লিকফটকের বাসিন্দা তারক। যকৃৎ পেয়েছেন কসবার কুমোরপাড়ার বাসিন্দা স্বরূপ। অন্য কিডনি আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিস্থাপিত হয়েছে ২২ বছরের এক জওয়ানের শরীরে।
এসএসকেএম সূত্রের খবর, সম্প্রতি এক তরুণ এবং এক তরুণীর ‘ব্রেন স্টেম ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ধর্মীয় ও সামাজিক কারণ দেখিয়ে অঙ্গদান থেকে পিছিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। চিকিৎসকদের মতে, অঙ্গদান নিয়ে যে-সব পরিবার এখনও কুসংস্কার, দ্বিধার শিকার, তাদের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন অপ্রতিমের স্ত্রী ঈপ্সিতা ঘোষ এবং আশি বছরের বৃদ্ধা মা কৃষ্ণা ঘোষ। অপ্রতিমের ‘ব্রেন স্টেম ডেথ’ ঘোষণা করা মাত্র ঈপ্সিতা অঙ্গদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অপ্রতিম নিজেও তা-ই চেয়েছিলেন। আট বছরের শিশুকন্যার মায়ের ক্ষেত্রে কোনও কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হয়নি। আর বৌমার সিদ্ধান্তের কথা শুনে শাশুড়ি মা বলেছেন, ‘‘আমরা ছেলে এতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচাবে, এর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। আমি খুশি।’’
অপ্রতিমের দাদা অসীমাভ ঘোষ জানান, শনিবার রাতে ভাইয়ের প্রবল মাথাব্যথা শুরু হয়। সকালেও ব্যথা না-কমায় অপ্রতিমকে ভর্তি করানো হয় বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। নিউরোসার্জন আশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভর্তির কিছু ক্ষণের মধ্যেই রোগী কোমায় চলে যান। মস্তিষ্কের অনেক অংশ জুড়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। সব রকম চেষ্টা করেও রোগীকে বাঁচানো যায়নি।’’
মুম্বইয়ের ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন বৎসলা ত্রিবেদী বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে একসঙ্গে হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ ও কিডনি প্রতিস্থাপন অনেক বড় বিষয়। এই কৃতিত্বের জন্য এসএসকেএমের প্রশংসা প্রাপ্য।’’ এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে তিন জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মানুষের স্বার্থে সকলে মিলে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’’