স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে নিজের মোবাইল নম্বর দিলে এটাই দেখতে পাচ্ছেন ওই করোনা-রোগীর পুত্রবধূ।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। থামের গা-ঘেঁষে হাঁটু মুড়ে বসে আছেন মাঝবয়সি এক মহিলা। কিছু ক্ষণ পরে ভিতর থেকে রোগীর নাম ধরে ডাকলেন পিপিই পরিহিত এক কর্মী। সেই নাম শুনে তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালেন বছর আশির কোভিড আক্রান্ত বৃদ্ধার বৌমা। ভেবেছিলেন, ১৮ দিনের অপেক্ষার অবসান হল। কিন্তু জুটল ল্যান্ডফোনের নম্বর লেখা একটি চিরকুট। ১৮ দিন ধরে হাসপাতালের যে নম্বরে একাধিক বার ফোন করে শুনতে হয়েছে, ‘ওই নামে কোনও রোগী এখানে ভর্তি নেই’!
রোগীর শারীরিক অবস্থার খুঁটিনাটি তথ্য পরিজনেদের জানাতে সোমবারই ‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর কথা ঘোষণা করেছে নবান্ন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড হাসপাতালে রোগীর খবর পেতে পরিজনেরা কী ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন, সেই ছবি ধরা পড়ল।
গত ৩১ জুলাই বিকেলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ওই বৃদ্ধাকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতা মেডিক্যালে। বৃদ্ধার বৌমা জানান, জরুরি বিভাগের দোতলায় সিবি-আপ ব্লকে তাঁর শাশুড়িকে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু সে দিনের পর থেকে তিনি কেমন আছেন, জানতে পারছেন না তাঁরা।
পুত্রবধূর অভিযোগ, ন্যাশনালে ভর্তির নথি এবং কোভিড-রিপোর্ট থাকলেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রমাণস্বরূপ কোনও কাগজ তাঁদের দেওয়া হয়নি। শাশুড়ির অবস্থা জানার জন্য একটি ল্যান্ডফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল। মহিলা বলেন, ‘‘মাকে ভর্তির সময়ে আমার মোবাইল নম্বর দিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফোন পাইনি। আমি হাসপাতালের দেওয়া নম্বরে ফোন করলে বলা হচ্ছে, ওই নামে কেউ ভর্তি নেই!’’
এমন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে চালু হয়েছে ‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। বৃদ্ধার পুত্রবধূ জানান, তিনি স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া লিঙ্কের মাধ্যমে এই পরিষেবা ব্যবহার করেন। কিন্তু ওটিপি পেতে তাঁর মোবাইল নম্বর দেওয়া মাত্র ভেসে ওঠে, ‘মোবাইল নম্বর হাসপাতালের নথির সঙ্গে মিলছে না’। মহিলার দাবি, শাশুড়িকে ভর্তি করানোর সময়ে তিনি ওই নম্বরই দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই, রোগীর পরিজনেদের দেওয়া তথ্য ঠিক মতো নথিভুক্ত হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ এক প্রতিবেশীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন বৃদ্ধার পুত্রবধূ। গত ১৮ দিনের মতোই জরুরি বিভাগ এবং সুপারের প্রশাসনিক কার্যালয়ের মধ্যে ঘুরতে থাকেন তিনি। বিকেলে ঘটনাটি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সুপারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, পুত্রবধূর দাবিই ঠিক। গত ৩১ জুলাই সিবি-আপে বৃদ্ধাকে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে। বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা এ দিন সন্ধ্যায় ছিল ৯০।
শাশুড়ি কেমন আছেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও হাসপাতাল থেকে তা জানতে পারেননি পুত্রবধূ। পরে সংবাদমাধ্যমের তরফে তাঁকে এই তথ্য জানানো হয়। মহিলার প্রশ্ন, সন্ধ্যায় যে তথ্য মিলল, ১৮ দিন ধরে তা জানা গেল না কেন? দ্বিতীয়ত, সিবি-আপে যে রোগিণী ভর্তি হয়েছিলেন, তিনি এখন কোন ব্লকে ভর্তি তা জানানোর দায় কার?
উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘রোগীকে এক বিল্ডিং থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার সময়ে যাতে পরিজনেরা সুনির্দিষ্ট তথ্য পান, সেই বিষয়ে আরও নজর দেওয়া হবে।’’