Rampurhat

বগটুইয়ের ভিটেয় ফিরেছে স্বজনহারা অনেক পরিবার

২১ মার্চ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জাতীয় সড়কের ধারে, বগটুই মোড়ে চায়ের দোকানের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু ও তাঁর অনুগামীরা।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

বগটুই (রামপুরহাট) শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:০২
Share:

খালি বাড়ি আবার ভর্তি। ফিরেছেন অনেকেই। সোমবার বগটুই গ্রামে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

বগটুইয়ে ক্ষতিপূরণের মামলায় রাজ্যের রিপোর্টে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারতপতি সন্তুষ্ট। কিন্তু, ঘটনার মূল অভিযুক্ত এখনও ধরা না পড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অগ্নিকাণ্ডে স্বজনহারাদের পরিবারগুলি।

Advertisement

২১ মার্চ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জাতীয় সড়কের ধারে, বগটুই মোড়ে চায়ের দোকানের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু ও তাঁর অনুগামীরা। দুষ্কৃতীদের বোমার আঘাতে ভাদুর মৃত্যু হয়। তার পাল্টা হিসেবে বগটুই গ্রামে বেছে বেছে ভাদু-বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। কুপিয়ে, পুড়িয়ে মারা হয় ৯ মহিলা-সহ ১০ জনকে। ওই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের কাছে যায়। চার্জশিটও জমা পড়েছে রামপুরহাট আদালতে।

ঘটনার পর থেকে গ্রামছাড়া ছিল স্বজনহারা পরিবারগুলি। ক্ষতিপূরণের টাকায় দগ্ধ বাড়ি সারানোর কাজ শুরু হয়েছিল। সোমবার দুপুরে বগটুই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রায় সকলেই তাঁদের নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। ফটিক শেখ, মিহিলাল শেখরা জানালেন প্রায় এক মাস আগে তাঁরা ফিরেছেন। ভাদু-খুনের বদলার হামলায় মা, স্ত্রী, মেয়ে ও জামাইকে হারিয়েছেন বানিরুল শেখ। এ দিন তাঁকে দেখা গেল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিজের বাড়ির কাজ করছেন। ইদের আগে থেকেই বগটুই গ্রামে ভাগ্নে পলাশ খানের বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকছেন বানিরুল। নেকলাল, শেখলাল সকলেই বাড়ি ফিরেছেন। অগ্নিকাণ্ডে মৃত আতাহারা বিবির বাড়ির লোকজনকেও তাদের নিজের বাড়িতে দেখা গেল। ফটিক শেখ জানালেন, ‘‘কুড়ি দিন আগে ফিরেছি।’’

Advertisement

ওই হামলাতেই স্ত্রী মিনা বিবিকে হারিয়েছেন ফটিক শেখ। এ দিন বাড়ির মেঝেয় এখনও জমাট বেঁধে থাকা স্ত্রীর রক্তের দাগ দেখিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন ফটিক। ভাদু-খুনের পর দিন, ২২ মার্চ সকালে যাঁর বাড়ি থেকে প্রথম সাতটি পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার হয়েছিল, সেই সোনা শেখের বাড়ি এখনও সিবিআইয়ের ঘেরাটোপে থাকায় সেখানে এখনও কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। সোনা শেখের ছোট ছেলে আসাদুল শেখের কাছে বাড়ির চাবি থাকলেও ওই বাড়িতে সিবিআই তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমতি ছাড়া আসাদুল বা তাঁর পরিবারের লোকজন প্রবেশ করতে পারেন না। তবে, ফটিক শেখের বাড়ি সংলগ্ন ভাদু শেখের দাদা বা ভাইদের বাড়ির লোকজনদের কাউকেই বাড়িতে দেখা যায়নি এ দিন। গ্রাম সূত্রে জানা গেল নিহত উপপ্রধানের আত্মীয় পরিজনেরা বর্তমানে ভাদুর বগটুই মোড় সংলগ্ন বাড়িতে থাকেন।

বগটুই গ্রামে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের ভূমিকায় তাঁরা সন্তুষ্ট। কিন্তু, কুপিয়ে পুড়িয়ে মারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্ত ভাদু-ঘনিষ্ঠ লালন শেখ(বড়), জাহাঙ্গির শেখ সহ এখনও অনেকে ফেরার। মূল অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তুলছেন তাঁরা।

স্বজনহারা পরিবারগুলির অভিযোগ, ভাদু খুনের মামলায় পলাশ শেখ, সফিকুল শেখ, সঞ্জু শেখদের মতো কয়েকজনের নামে মিত্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা ভাদু খুনের ঘটনার আগে থেকেই গ্রামের বাইরে থাকতেন। পাশাপাশি বগটুই গ্রামে ওই ঘটনার পর থেকেই যে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প তাঁবু খাটিয়ে চলছে, তা স্থায়ী ভাবে সরকারি জমিতে করার দাবিও করেছেন স্বজনহারারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement