(বাঁ দিক থেকে) হাশিবুর শেখ, সুমন সর্দার এবং ফয়জেম শেখ। —ফাইল চিত্র।
কলকাতার চর্মনগরীতে ম্যানহোলে নেমে মৃত্যু হয় তিন শ্রমিকের। তাঁদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি মুর্শিদাবাদ। অন্য জনের উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাট এলাকায়। শোকস্তব্ধ পরিবারের মুখে একটাই কথা, ‘‘দোষীদের শাস্তি চাই’’। তাদের দাবি, নির্মাণের কাজ দেবে বলেছিলেন স্থানীয় ঠিকাদার। কিন্তু কলকাতায় এনে ম্যানহোল পরিষ্কার করানোর কাজ দেন। সেই ম্যানহোলের ‘মৃত্যুফাঁদে’ বলি হলেন তিন শ্রমিক।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বছর ষাটের ফরজেম শেখ। তাঁর পাশের গ্রামের বাসিন্দা হাশিবুর শেখ। অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁরা কলকাতায় এসেছিলেন কাজ করতে। পরিবার জানত, কলকাতায় নির্মাণকাজ করতে যাচ্ছেন তাঁরা। মৃত শ্রমিকদের পরিজনদের দাবি, এক সহকর্মীর ফোনে প্রথমে ঘটনার কথা তাঁরা জানতে পারেন। তবে বিশ্বাস হয়নি। ফোন করেন শ্রমিকদের ফোনে। বার বার ফোন করেও উত্তর মেলেনি। কিছু ক্ষণ পর থানা থেকে ফোনে পুলিশ হাশিবুর এবং ফরজেমের মৃত্যুর খবর জানায়। পরে সংবাদমাধ্যমে তাঁদের ছবি দেখে চিনতে পারে মুর্শিদাবাদের দুই শ্রমিকের পরিবার। তাদের দাবি, স্থানীয় ঠিকাদার আলিমুদ্দিন শেখের কথাতেই কলকাতায় কাজে গিয়েছিলেন হাশিবুরেরা। কিন্তু নির্মাণের কাজ না দিয়ে ম্যানহোলে নামানো হয় তাঁদের। আলিমুদ্দিনের কঠোর শাস্তির দাবি করছে মৃত শ্রমিকের পরিবার।
মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানা এলাকার ঠিকাদার আলিমুদ্দিন। সেই এলাকাতেই থাকেন হাশিবুর এবং ফরজেম। হাশিবুর আইরামারি গ্রামের বাসিন্দা আর ফরজেম আরশাদ দহ গ্রামে থাকতেন। তাদের পরিবারের দাবি, প্রথমে এক সহকর্মী ফোন করে জানান, ড্রেন পরিষ্কার করতে নেমে গ্যাসে মৃত্যু হয়েছে হাশিবুরদের! বিশ্বাস না হওয়ায় ফোন করা হয় ঠিকাদার আলিমুদ্দিনকে। কিন্তু তাঁরও ফোন বন্ধ ছিল। তার পরই পুলিশের থেকে মৃত্যুর খবর পায় তারা। হাশিবুরের ভাই রমজান শেখ বলেন, ‘‘আমার দাদা বৃদ্ধ। টাকার লোভ দেখিয়ে ওঁকে ম্যানহলে নামানো হয়। যা খুনের সমান।’’ ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের শাস্তির দাবি জানান তিনি। ফরজেমের দিদি রোজিনা বিবি বলেন, ‘‘আমরা জানতাম ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে। হয়তো টাকার লোভ দেখিয়ে ওকে এই সব (ম্যানহোল পরিষ্কার) করিয়েছে। আলিমুদ্দিনের যেন শাস্তি হয়।’’
অন্য দিকে, ন্যাজাট এলাকার বাসিন্দা সুমন সর্দারেরও একই পরিণতি হয়েছে। বছর ত্রিশের এই যুবক পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। স্ত্রী, মা ও দৃষ্টিহীন বাবা ছাড়াও বাড়িতে রয়েছে সুমনের ছোট ছোট চার সন্তান। আট জনের পরিবার চলত তাঁরই রোজগারে। যুবকের মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে গেল সেই রোজগারের পথও। অসহায় পরিবার। তিন শ্রমিকের মৃত্যুতে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা বলেছেন কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে সুমনের পরিবারের দাবি। আর্থিক সাহায্য নয়, চাই কর্মসংস্থান। একই সঙ্গে ঘটনার পূর্ণ তদন্তেরও দাবি জানাচ্ছেন সুমনের বাবা দয়াল সর্দার। কান্নাভেজা গলায় তিনি বলেন, ‘‘ছেলে চলে গেল। আমরা অথৈ জলে পড়ে গেলাম!’’