হদিস নেই ৪০ নৌকাযাত্রীর, মেলেনি ক্ষতিপূরণের টাকাও

২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুরের হিজলিশরিফ থেকে কাকদ্বীপে ফেরার পথে শ’দুয়েক যাত্রী নিয়ে নদীতে তলিয়ে যায় একটি ভুটভুটি।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৬
Share:

মুর্শিদা বিবি

ঘরের মানুষগুলো ভেসে গিয়েছেন কোথায়, খোঁজ মেলেনি গত ন’বছরে। তবে মিলেছে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি। ভোট এলেই নেতারা প্রতিশ্রুতি বিলিয়েছেন দেদার। কিন্তু অভিযোগ, দুঃস্থ পরিবারগুলির হাত কার্যত খালিই থেকে গিয়েছে।

Advertisement

২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুরের হিজলিশরিফ থেকে কাকদ্বীপে ফেরার পথে শ’দুয়েক যাত্রী নিয়ে নদীতে তলিয়ে যায় একটি ভুটভুটি। কাকদ্বীপের সূর্যনগর, শ্রীনগর ও আনন্দনগর গ্রামের অনেকে ছিলেন সেখানে। পরের চার দিন তল্লাশি চালিয়ে শ’দেড়েক দেহ উদ্ধার হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, এখনও নিখোঁজ জনা চল্লিশ।

তৎকালীন বাম সরকারের তরফে ২ লক্ষ ও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আরও ২ লক্ষ পেয়েছিল মৃতের পরিবারগুলি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সাত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে নিখোঁজের পরিবারকেও রাজ্যের তরফে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। পঞ্চায়েতের তরফে শংসাপত্র দেওয়ার পরে সরকারি পর্যায়ে সাহায্য মেলে। কিন্তু নিখোঁজের পরিবারের অনেকের দাবি, কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন দফতরের দরজায় ঘুরেও লাভ হয়নি প্রায় কিছুই।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভুটভুটি ডুবে নিখোঁজ শ্রীনগর গ্রামের সেকেন্দর মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী মুর্শিদা বিবি। দুই ছেলে মইদুল ও সইদুল ঘটনার সময়ে নাবালক ছিল। বাবা-মা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে দুই ভাই আর স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। তাঁদের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘দুই ভাইকে নিয়ে সরকারি দফতরে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পাইনি। একটা সময়ে দুই ভাই কাজের সন্ধানে গুজরাত চলে যায়।’’

কলের মিস্ত্রির কাজ করেন ফিরোজউদ্দিন মোল্লা। মা ফিরোজা ও ভাইঝি শান্ত খাতুন নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন। বেশ কয়েক বার বিডিও অফিস, পঞ্চায়েতে দরবার করেছেন ফিরোজ। তাঁরও দাবি, ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে আসেনি। ফিরোজের কথায়, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে আমরা ক্ষতিপূরণের দাবি করছিলাম। শাসকদলের লোকেরা ১০ হাজার টাকা হাতে দিয়েছিলেন। তার পরে আর কোনও সাড়াশব্দ নেই।’’

আনন্দনগর গ্রামের নজরুল শেখ ছিলেন ভুটভুটিতে। দুর্ঘটনার পর থেকে খোঁজ নেই নজরুল ও তাঁর এক নাতনির। নজরুলের ছেলে রাইয়ান শেখের দাবি, কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কিন্তু কোন দফতর টাকা দিয়েছিল, কার হাত থেকে টাকা নিয়েছিলেন, কত টাকাই বা পেয়েছিলেন— সে সব মনে করতে পারেন না রাইয়ান।

গ্রামের অনেকে জানালেন, ভোট এলে নেতারা গ্রামে আসেন। তখন ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ ওঠে। কেউ কেউ হাতে দু’-পাঁচ হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে চলে যান। আর দিয়ে যান ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। ‘ভোট মিটলে দেখছি-দেখব’ বললেও পরে আর উচ্চবাচ্য করেন না কেউ— অভিযোগ নিখোঁজের পরিবারগুলির।

সূর্য্যপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সোমা সামন্ত বলেন, ‘‘আমরা নিখোঁজের পরিজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করছি।’’ সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার কথায়, ‘‘জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। কয়েক জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বলে জানান কর্তারা। বাকিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। আমার কাছে ওই বিষয়ে কোনও খোঁজ নেই। কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসনের কাছে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

হাতে রইল, সেই আর এক দফা প্রতিশ্রুতিই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement