—প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ৮৫ লক্ষ রেশন কার্ড ভুয়ো বলে আগেই জানা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘এক কোটি রেশন কার্ড আমরা বাতিল করেছি।’’
আর শুক্রবার রেশন ডিলারদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর বিস্ফোরক দাবি, খাদ্য দফতর প্রায় এক কোটি কার্ড ভুয়ো বলে বাতিল করলেও সেই সব কার্ডের নামে খাদ্যদ্রব্য বরাদ্দ করেই চলেছে খাদ্য দফতর। তিনি বলেন, ‘‘তবে মজার ব্যাপার সেই বরাদ্দ কিন্তু রেশন ডিলারদের কাছে আসছে না। মাঝপথে উধাও হয়ে যাচ্ছে!’’
উল্লেখ্য, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড সংযুক্তিকরণের কাজ যখন শুরু হয়েছিল, তখন প্রচুর রেশন কার্ডের তথ্যের সঙ্গে আধারের তথ্য মেলেনি। সেই কারণেই পরে ওই রেশন কার্ডগুলিকে চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। বলা হয়, উপযুক্ত প্রমাণ দিলে সেই সব নিষ্ক্রিয় কার্ডকে সক্রিয় করা হবে।
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, এখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেশন তোলা হচ্ছে। প্রতি উপভোক্তার মোবাইল ফোনে রেশন তোলার তথ্য পৌঁছচ্ছে।
এ দিকে এ দিনই রেশন দুর্নীতি নিয়ে সরাসরি খাদ্য দফতরের দিকে আঙুল তুললেন বিশ্বম্ভর। তাঁর দাবি, রেশন দুর্নীতি হয়েছে। তবে তার সঙ্গে সাধারণ রেশন ডিলারদের কোনও যোগ নেই। তবে এই দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রী সরাসরি জড়িত কি না তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বিশ্বম্ভরের দাবি, ‘‘দুর্নীতি হয়েছে উপরের তলায়। তার সঙ্গে ডিলারদের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ রেশন ব্যবস্থা মানেই ডিলারদেরই বোঝেন। অভিযোগের আঙুল ওঠে আমাদের দিকে।’’ তিনি জানান, রেশন ব্যবস্থায় ডিজিটাল কার্ড চালু হওয়ার পরে, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় বৈধ কার্ড থাকা সত্ত্বেও ডিলাররা গ্রাহককে চাল-গম দিতে পারছেন না। কারণ, ডিজিটাল ব্যবস্থায় দেখাচ্ছে তাঁর কার্ড ভুয়ো হিসেবে গণ্য হওয়ায় বাতিল হয়ে গিয়েছে। বিশ্বম্ভরের কথায়, ‘‘অথচ তিনি হয়তো পুরনো গ্রাহক। আমরা তাঁকে চিনি। কিন্তু খাদ্য দফতর কার্ড ব্লক করে দিয়েছে। আর আমরা রেশন-রোষের শিকার হচ্ছি।’’
এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পের দিকেও আঙুল তুলেছেন বিশ্বম্ভর। রেশন ডিলার ফেডারেশনের দাবি, ওই ভুয়ো কার্ডের রেশনই (বরাদ্দ সামগ্রী) সরকারি প্রকল্পকে সফল করতে অন্যত্র বিলি হচ্ছে। ভুয়ো কার্ড নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেই রেশন ডিলারদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে— কার্ড দিয়েছে খাদ্য দফতর। তা হলে সে কার্ড ভুয়ো হল কী করে! খাদ্যভবনের আইটি সেল তা যাচাই করল না কেন?
বিশ্বম্ভরেরা যে অভিযোগ তুলেছেন, সেই অভিযোগে আগেই সরব হয়েছিল বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেশন ডিলারদের এড়িয়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে মূলত দুর্নীতি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ধরলে খাদ্যে দুর্নীতির অঙ্ক বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’’ বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘এই সময়ে বেশ কিছু ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। আমি এইটুকু বলতে পারি, রেশন সামগ্রী এখন পুরোপুরি অনলাইন ব্যবস্থায় বরাদ্দ করা হয়। সেখানে বাতিল করা কার্ডের জন্য কোনও সামগ্রী বরাদ্দ হয় না। দেওয়া হয় শুধুমাত্র যে কার্ডগুলো সক্রিয় রয়েছে, তার ভিত্তিতে। যদি কোথাও রেশন সামগ্রী ডিলারের কাছে অতিরিক্ত থাকে, পরের বার বরাদ্দের সময় সেই পরিমাণ কম দেওয়া হয়।’’