রক্ষণাবেক্ষণ: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মভিটের অবশিষ্ট অংশ সংস্কারের কাজে হাত লাগিয়েছেন ‘আমরা কৃষ্ণনগরবাসী’র সদস্যেরা। রবিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
রেললাইনের পাশে কোনও মতে টিকে আছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মভিটের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু— তাঁর বাড়ির তোরণ। বছরে এক দিন তোরণের চারপাশ পরিষ্কার করে কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে স্মৃতিরক্ষা কমিটি। ওই পর্যন্তই। সারা বছর নেশাড়ুদের দখলে থাকে এলাকা। সেখানে চলে মদ-গাঁজার ঠেক। এই পরিস্থিতিতে কবির স্মৃতিরক্ষায় এগিয়ে এল একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্যেরা।
মাসকয়েক আগে কৃষ্ণনগর শহরে আসা শান্তিনিকেতনের এক বাসিন্দা কবির জন্মভিটের স্মৃতিচিহ্নের দুরবস্থার ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে দেন। ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। তা দেখেই ফেসবুকের ‘আমরা কৃষ্ণনগরবাসী’ নামের একটি গ্রুপের সদস্যেরা সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কবির শেষ চিহ্ন রক্ষার দায়িত্ব নেবেন।
২৬ জানুয়ারি কৃষ্ণনগর স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের ধারে ওই তোরণের আশেপাশ পরিষ্কার করা হয়। ময়লা-আবর্জনার মধ্যে মেলে প্রচুর পরিমাণে মদের বোতল, গাঁজার কল্কে। ওই দিন প্রায় ২৭ ভ্যান আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় এলাকা থেকে। সে দিনই সিদ্ধান্ত হয়, এলাকা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেবেন তাঁরা। সেই মতো রবিবার আবার সকলে জড়ো হন। হাত লাগিয়ে পাঁচিল তোলেন।
বছর পাঁচেক আগে ফেসবুকের এই গ্রুপ তৈরি হয়। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। বছর খানেক আগে গ্রুপটি সামাজিক কাজে যুক্ত হয়েছে। একটা কমিটিও তৈরি হয়েছে, যার নাম ‘আমরা কৃষ্ণনগরবাসী সামাজিক গণমাধ্যম গোষ্ঠী’।
সংগঠনের সভাপতি অরিন্দম দেব বলেন, “দ্বিজেন্দ্রলাল রায় শুধু আমাদের শহরের নয়, বাঙালির গর্ব। আজ তাঁর জন্মভিটের কিছুই অবশিষ্ট নেই ওই তোরণটুকু ছাড়া। সেটাও অনাদরে, অবহেলায় ধ্বংস হতে বসেছে। এটা লজ্জার।’’ তিনি জানিয়েছেন, সেই কারণেই তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। জন্মভিটের ওই অবশিষ্ট অংশ সংস্কার করে রক্ষণাবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে।
এই তোরণের জমি বর্তমানে রেলের সম্পত্তি। এই জায়গার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও রেলের। এ বিষয়ে কৃষ্ণনগর স্টেশন ম্যানেজার রামগোপাল সিংহ বলেন, “ওই এলাকা দেখাশোনা করে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলব।”
প্রশ্ন উঠছে, এত দিন কবির স্মৃতিচিহ্ন রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি কেন? প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলছেন, “ওটা রেলের জমির উপরে। তা ছাড়া, এর দেখভালের দায়িত্বে আছে স্মৃতিরক্ষা কমিটি। ফলে, আমরা চাইলেও কিছু করতে পারি না।”
অন্য দিকে, স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি স্বয়ং জেলাশাসক বিভু গোয়েল। তিনি বলেন, “কমিটির অন্যদের সঙ্গে কথা বলে কবির জন্মভিটের অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।” অরিন্দমদের দাবি, বেশ কয়েক বছর আগে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মৃতিরক্ষা কমিটি পাঁচিল দিয়ে চার দিক ঘিরেছিল। কিন্তু এলাকার নেশাড়ুরা সেই পাঁচিল ভেঙে ফেলেছে। এ দিন সেই ভেঙে যাওয়া ভিতের উপরেই তৈরি হল পাঁচিল।