প্রতীকী ছবি।
এক দিকে যেমন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আর্সেনিক-প্রবণ এলাকার সংখ্যাও। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেই জানাচ্ছেন, এ ভাবে জলস্তর কমলে ভবিষ্যতে খাদ্যশৃঙ্খল দূষিত হতে পারে। যার প্রভাব পড়বে জনজীবনে।
সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১২-র আগে আর্সেনিক-প্রবণ এলাকা ছিল ৮৯টি। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০৪। বোর্ডের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা অম্লানজ্যোতি কর জানাচ্ছেন, আগে প্রতি লিটার জলে ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক থাকলে তাকে বিপজ্জনক ধরা হত। এখন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন (আইএসও) বলছে, এক লিটার জলে আর্সেনিক ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি থাকলেই তা মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাজ্যের বহু ব্লকে যে ভাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামছে, তাতে আর্সেনিক সংক্রমণের প্রবণতা বাড়তে পারে। বর্তমানে ৩০টি ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলস্তর ‘বিপজ্জনক’ এবং ৪২টি ব্লকের হাল ‘আংশিক বিপজ্জনক’। এ বার আরও বেশি জল তোলা হলে সে সব জায়গার ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘যে হেতু ভূগর্ভস্থ জলস্তরের বেশির ভাগটাই সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়, তাই সেই জলে আর্সেনিক থাকলে তা ফসলেও ঢুকবে। শেষে যা প্রবেশ করবে মানবদেহে।’’ অম্লানজ্যোতিবাবুর কথায়, ‘‘এই আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলগুলিতে।’’
আরও পড়ুন: দূরশিক্ষায় পড়াশোনা, দানা বাধছে জটিলতা
রাজ্য প্রশাসন এবং সেন্ট্রাল ওয়াটার বোর্ডের বিশেষজ্ঞদের একাংশের পরামর্শ, ভূগর্ভস্থ জল তোলা কমিয়ে সমবায়ভিত্তিক জল ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া উচিত। তা হলে একটি সূত্র থেকে জল তুললেই অনেকটা এলাকায় চাষ করা সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, চিহ্নিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে কম জলে কী ভাবে চাষ সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে হবে। বন্যার জল, খাল-বিল, এমনকি, বৃষ্টির জল ধরে কী ভাবে তা চাষে ব্যবহার করা যায়, তার রূপরেখা তৈরি করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় জল তোলা রুখতে সেন্সর জাতীয় প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও ভাবতে হবে। অম্লানজ্যোতিবাবু বলেন, ‘‘বর্ধমান, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, হাওড়া এবং দুই মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলির কোনও কোনও অংশে জলস্তর ২৫ মিটারের নীচে নেমে গিয়েছে। এ দিকে বৃষ্টিপাত অনিয়মিত এবং বর্ষার স্বাভাবিক সময়সীমা পিছিয়ে গিয়েছে। তাই এ সব মাথায় রেখে বোরো চাষে বৈচিত্র আনতে হবে। অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি কম জলে হওয়া চাষেও উৎসাহ দিতে হবে কৃষকদের।’’
প্রশাসনের কিছু সূত্র অনুযায়ী, ৮০-র দশক থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত গভীর, অগভীর নলকূপ এবং কুয়ো ব্যবহারের প্রবণতা বেশি ছিল। তার পর শুরু হয় মোটরচালিত পাম্পসেটের ব্যাপক ব্যবহার। ২০১১-র শেষে পাপ ব্যবহারের নানাবিধ বিধিনিষেধও অনেকাংশে শিথিল করে রাজ্য। প্রশাসনের দাবি, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল, বাস্তবে বহু জায়গায় তা প্রতিফলিত হয়নি। বরং তার অনৈতিক সুযোগ নিতে শুরু করে একটা অংশ। সংশ্লিষ্ট মহলটি জানাচ্ছে, রাজ্যের ‘বিপজ্জনক’ এবং ‘আংশিক বিপজ্জনক’ ব্লকে অবিলম্বে জল তোলায় বিধিনিষেধ ফেরানো জরুরি।
এ নিয়ে জলসম্পদ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘একটা রোডম্যাপ তৈরি করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিস্থিতি বদলানোর কাজ করব। কৃষকদের বুঝিয়ে পাম্প ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ এবং নীতি আনা হবে। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে নিয়ে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি হয়েছে। পঞ্চায়েত ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের নিয়েও কর্মশালা হবে।’’