করোনা আতঙ্কে সুনসান কলকাতা বিমানবন্দর চত্বর। বুধবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
আবুধাবি থেকে রবিবার রাত ৩টেয় ইতিহাদ এয়ারওয়েজের উড়ানে কলকাতায় পৌঁছনোর পরে আমলা-পুত্রের জ্বর ছিল কি না, তা দেখা হয়েছিল। জ্বরের প্রমাণ মেলেনি। বিমানবন্দরে যাত্রীদের যে-ফর্ম পূরণ করতে বলা হচ্ছে, তাতে জানতে চাওয়া হচ্ছে, তাঁর জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের কোনও লক্ষণ আছে কি না। সেই ফর্মে ওই তরুণ জানান, তাঁর শরীরে ওই তিনটি উপসর্গ নেই।
অথচ সেই তরুণের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেল মঙ্গলবার। তিনি বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কলকাতার প্রথম করোনা-রোগী তিনিই। প্রশ্ন উঠছে বিমানবন্দরের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। তাই টার্মিনালের যেখানে পরীক্ষা হয়, সেখানে সে-রাতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে যে-ছবি উঠেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যিই কি ওই তরুণকে যথাযথ ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল? তরুণের মা উচ্চপদস্থ আমলা। সেই সূত্রে প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে তাড়াতাড়ি বিমানবন্দর থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। যদিও তার কোনও প্রামাণ্য নথি এখনও পাওয়া যায়নি।
সে-রাতে ইতিহাদের ওই উড়ানে আমলা-পুত্রকে নিয়ে ৭০ জন যাত্রী ছিলেন, সকলেই ভারতীয়। সেই সব যাত্রী সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য চেয়ে পাঠিয়ে যাচাই করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তরুণের আসন ছিল ১১এফ। ১১ নম্বর সারির বাঁ দিকের জানলার ধারের আসন। করোনা-আতঙ্ক ছড়ানোর পরে বলা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তি যে-সারিতে বসবেন, সেটি ছাড়াও তার সামনে ও পিছনের দু’টি করে আসনের যাত্রীরাও বিপজ্জনক এলাকার অন্তর্ভুক্ত। বিমানে আসার সময়েই যদি তরুণের শরীরে সংক্রমণ থেকে থাকে, তা হলে নয় থেকে ১৩ নম্বর সারিতে বসা সব যাত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা থেকে যায়। তাই ওই পাঁচটি সারির সব যাত্রীর ‘প্রোফাইল’ বা তথ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই রুটে ইতিহাদ যে-এয়ারবাস৩২০ বিমান চালায়, তার প্রতিটি সারিতে ছ’টি আসন থাকে। তার অর্থ ৩০টি আসনের যাত্রীরা বিপজ্জনক এলাকার অন্তর্ভুক্ত। তবে গোটা বিমানে যে-হেতু ৭০ জন যাত্রী ছিলেন, তাই ওই পাঁচটি সারিতে ৩০ জন যাত্রী না-থাকারই কথা। ওই পাঁচটি সারিতে ঠিক ক’জন যাত্রী ছিলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই যাত্রীদের বেশির ভাগই কলকাতার বাসিন্দা। ১৫ মার্চ গভীর রাতে কলকাতায় নেমে তাঁরা নিজের নিজের বাড়ি বা আস্তানায় চলে গিয়েছেন। যদি কারও শরীরে সংক্রমণ ঘটে থাকে, সেখান থেকে তা আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই বিমানে দু’জন পাইলট ছাড়াও পাঁচ জন বিমানসেবিকা ছিলেন। তাঁরা কলকাতায় যাত্রীদের নামিয়ে এখান থেকে যাত্রীদের তুলে আবার আবুধাবি উড়ে যান। ওই বিমানসেবিকাদের কেউ যদি আমলা-পুত্রের থেকে সংক্রমিত হয়ে থাকেন, তা হলে কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যেই ওই বিমানসেবিকারা আরও অন্তত ১০টি উড়ানে কাজ করেছেন এবং কয়েকশো যাত্রী তাঁদের কাছাকাছি এসেছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, যাঁর শরীরে মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের প্রমাণ মিলেছে, রবিবারেও যদি তাঁর শরীরে তার কোনও লক্ষণ প্রকট না-হয়ে থাকে, তা হলে এর মধ্যে যে-হাজার হাজার যাত্রী বিদেশ থেকে কলকাতায় এসেছেন (যাঁদের পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে), তাঁদের শরীরেও তো ভাইরাস ঢুকে থাকতে পারে। তা হলে বিমানবন্দরে থার্মাল পরীক্ষা করে কী লাভ হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠছে।