Heavy rains in Sikkim

বর্ষার শুরুতেই তিস্তাকে ফুঁসে উঠতে দেখেনি উত্তরবঙ্গ! নেপথ্যে কি রেল সুড়ঙ্গ ও অক্টোবর-বিপর্যয়?

আগামী দু’দিন উত্তর সিকিমে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আশঙ্কা, আবার ফুলেফেঁপে উঠে গত বছরের মতো বিপর্যয় ডেকে আনবে না তো তিস্তা?

Advertisement

পার্থপ্রতিম দাস

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪ ১৯:৩৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বেলা বাড়তেই খানিক নেমেছে তিস্তার জলস্তর। কিন্তু দুর্যোগের মেঘ যে কেটে গিয়েছে, তা কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না। আগামী দু’দিন উত্তর সিকিমে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আশঙ্কা, আবার ফুলেফেঁপে উঠে গত বছরের মতো বিপর্যয় ডেকে আনবে না তো তিস্তা? বর্ষার সময় পাহাড়ে ধস স্বাভাবিক বিষয় হলেও, বর্ষার শুরুতেই তিস্তার এমন রূপ পাহাড়বাসীর গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় নেই। ঘটনাচক্রে, এই পরিস্থিতির নেপথ্যে গত অক্টোবরের সেই বিপর্যয়ের ঘটনার যোগ থাকতে পারে বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। অনেকে আবার দায়ী করছেন রংপো রেল সুড়ঙ্গের নির্মাণকেও।

Advertisement

গত দু’দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে উত্তর সিকিমে। দক্ষিণ সিকিম থেকে গ্যাংটক— কিছুই বাদ যায়নি। আগামী দু’দিনের যা পূর্বাভাস, তা নজরে রেখে উত্তর সিকিমে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যান্য জায়গায় রয়েছে কমলা সতর্কতা। সিকিমের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বুধবার গ্যাংটকেই ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গেজ়িংয়ে বৃষ্টি হয়েছে ৬৫ মিলিমিটার। দক্ষিণ সিকিমের রাভাংলাতে বৃষ্টি হয়েছে ১১৯.৫ মিলিমিটার। আর উত্তর সিকিমে শুধু মঙ্গনেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে জলস্তর বেড়েছে তিস্তার। সেই জল নদীখাত দিয়ে ঝড়ের বেগে নেমে এসেছে উত্তরবঙ্গের সমতলে। পাহাড়ি এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদী যে শুধু তিস্তাপা়রেই বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তা নয়। জলপাইগুড়ির সরস্বতীপুর চা-বাগান এলাকা থেকে শুরু করে গজলডোবা ব্যারেজ পার করে মিলনপল্লি চড় থেকে বোদাগঞ্জের গৌরিকোন, বারোপাটিয়া চড়, রন্ধামালির চড়-সহ দোমোহানির সেতু পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উত্তরবঙ্গেও বর্ষা প্রবেশ করেছে। গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার-সহ গোটা তরাই, ডুয়ার্সে। ফলে ফুলেফেঁপে উঠেছে তিস্তা। জলপাইগুড়ির জল ছাড়ায় তিস্তার নিম্ন অববাহিকাতেও জলস্তর বেড়েছে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা করছেন তরাই, ডুয়ার্সের বাসিন্দারাও। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই এমন বন্যা পরিস্থিতির সম্ভাবনা স্মরণযোগ্য কালে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না অনেকেই। উত্তর সিকিমে প্রবল বৃষ্টি হলেও, উত্তরবঙ্গে মাঝারিই বৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

তা সত্ত্বেও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তিস্তার এই ভয়াবহ রূপ কেন? শিলিগুড়ি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায়ের মত, গত বছর অক্টোবর মাসে প্রবল বৃষ্টির জেরে হড়পা বানে উত্তর সিকিমের চুংথাম বাঁধ ভেঙে যে বিপর্যয় হয়েছিল, তাতে জলের সঙ্গে পাথর, বালি, পলি-সহ অনেক কিছুই নীচের দিকে নেমে এসেছে। সেই পাথর, বালি, পলি নদীখাতে জমা হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই নদীর জলস্তর আগের চেয়ে বেড়েছে। যার ফলে ভারী বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও বানভাসি হচ্ছে নিম্ন অববাহিকা। পার্থপ্রতিমের সংযোজন, সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত রেল সুড়ঙ্গ নির্মাণের সময়েও প্রচুর বালি-পাথর নদীর পা়ড়ে জমা করা হয়েছিল। সেগুলিও বন্যার সময় জলের তোড়ে নদীগর্ভে গিয়ে পড়েছে। সে কারণে নদীর উচ্চতা খানিক বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে। তবে সবটাই নিজের প্রাথমিক অনুমান বলে ব্যাখ্যা করেছেন ওই অধ্যাপক। তাঁর বক্তব্য, পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া সঠিক কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়।

বাঁধ-বিপর্যয়ের কথা কথা বলছেন পরিবেশবিদ অনিমেষ বসুও। তিনি বলেন, ‘‘গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে এমন কিছু বৃষ্টি হয়নি যে, তিস্তা এমন ভয়াল রূপ ধারণ করবে। যা বৃষ্টি হয়েছে উত্তর সিকিমে। এতেই যদি এই পরিস্থিতি হয়, তা হলে বর্ষা ঢুকলে কী পরিস্থিতি হবে? এর অন্যতম কারণ, গত বছর বাঁধ ভেঙে বিপর্যয়ের কারণে বিপুল পরিমাণে পলি জমা হয়ে রয়েছে। আবার ওই এলাকায় খানিক দূরে দূরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে যে আরও কত পলি জমা হয়ে রয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। কাজেই সব মিলিয়ে নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। যার ফল আগামী দিনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমাদের আরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement