প্রতীকী ছবি
এক দিকে ধোঁয়াশা রয়েছে উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের সার্স-কোভ-২ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নিয়ে। অন্য দিকে, ধোঁয়াশা রয়েছে এলাকা নির্বিশেষে সংক্রমিত ও মৃতের খবর সব সময়ে নথিভুক্ত হচ্ছে কি না তা নিয়েও। মৃত্যুর বিষয়টি আবার জটিল হয়ে যাচ্ছে কো-মর্বিডিটি থাকলে। তখন এটা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না, কোভিড না কি অন্য রোগে মৃত্যু হয়েছে। ফলে এত অনিশ্চয়তা থাকার কারণে এই মুহূর্তে কোভিডে মৃত্যুর হার (কেস ফেটালিটি রেশিয়ো বা সিএফআর) কত, তা নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
তাঁরা এও জানাচ্ছেন, মৃত্যুর হার সংক্রমণের তীব্রতা বুঝতে সাহায্য করে ঠিকই। কিন্তু সেটি তখনই বলা সম্ভব যখন সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, সমস্ত নথিভুক্ত ঘটনার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ফলাফলে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কোভিড ১৯-এর ক্ষেত্রে প্রতিদিনই নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন অনেকে। যেমন গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে প্রায় দু’লক্ষ চৌত্রিশ হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। সংস্থার বক্তব্য, বিভিন্ন দেশের কোভিড ১৯-এ সিএফআর-এর এতই ফারাক যে, এখনই এ নিয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। তা ছাড়া সংক্রমিতদের মধ্যে কত জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বা কত জনের মৃত্যু হয়েছে, সিএফআর বার করার ক্ষেত্রে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। ডব্লিউএইচও-র সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘সংক্রমণ না থামা পর্যন্ত কত জন সুস্থ হয়েছেন আর কত জনের মৃত্যু হয়েছে, সে সংখ্যাটা পাওয়া যাবে না। তাই সিএফআর বার করাটাও মুশকিল।’’
আরও পড়ুন: চার হাসপাতাল ঘুরে শয্যা পেলেন জখম যুবক
ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক শিতাভ্র সিংহ এখনও পর্যন্ত মোট সংক্রমিত রোগী ও মৃতের সংখ্যার নিরিখে কোভিড ১৯-এর মৃত্যুর হার বার করেছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত মৃত্যুর হার এটাই, এমন দাবি করা যাবে না। সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে শিতাভ্র জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বে কোভিড ১৯-এর মৃত্যুর হার ৩.৬ শতাংশ। ভারতে এই হার হল ১.৯৩ শতাংশ। ইউরোপীয় দেশগুলির সিএফআর তুলনামূলক ভাবে বেশি। যেমন, ইংল্যান্ড ও ইটালির ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ১৪ শতাংশ, ফ্রান্সের ১৫ শতাংশ এবং স্পেনের ৮ শতাংশ। উল্টো দিকে, শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে এই হার হল মাত্র ০.৪ শতাংশ। শিতাভ্রের কথায়, ‘‘এই হার, সংক্রমণের তীব্রতার একটা আভাস (ইন্ডিকেটিভ) মাত্র। কিন্তু কোভিড ১৯-এর মৃত্যুহার এখনই বলা সম্ভব নয়।’’
বিশেষজ্ঞদের একাংশের আবার বক্তব্য, সংক্রমণজনিত রোগের সিএফআর বার করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। যেমন কোভিড ১৯-এ উপসর্গহীন রোগী বা মৃদু উপসর্গের রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেগুলি নথিভুক্ত হচ্ছে না। ফলে হিসেবের বাইরেই থাকছে সে সব। আবার জনগোষ্ঠীর একটি অংশের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা ঠিক মতো পৌঁছয় না। ফলে সেই অংশের মধ্যে কত জন সংক্রমিত, সেই হিসেবও পাওয়া সম্ভব হয় না। এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘বিভিন্ন দেশের সংক্রমিত ও মৃতের যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, সেটি কতটা ঠিক তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার কো-মর্বিডিটি থাকলে সংশ্লিষ্ট রোগীর কী কারণে মৃত্যু হল, কোভিড ১৯, না কি অন্য রোগে সেটা বলা যাচ্ছে না। সংক্রমিত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা দেওয়া হচ্ছে নাকি তথ্য চাপা হচ্ছে সেটাও দেখতে হবে।’’ কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শহরে তবু সংক্রমিত রোগীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সম্ভব। কিন্তু গ্রামে কত জন সংক্রমিত হচ্ছেন, সেই তথ্য সব সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছয় না। তাই এখনই নির্ভুল সিএফআর বলা সম্ভব নয়।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)