পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরও প্রধানমন্ত্রী তিনি। এই রাজ্যের মানুষের উন্নয়নের জন্যও তিনি দায়বদ্ধ। এই উন্নয়নে কোনও রাজনীতি নেই।
৯ মে কলকাতা যাওয়ার প্রাক্কালে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘ভোটে জেতার পরে বলেছিলাম। আজ এ সরকারের বর্ষপূর্তির লগ্নেও বলছি, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কেন্দ্র-রাজ্য সুষ্ঠু সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যের রাজস্ব বরাদ্দ বাড়িয়েছি। রাজ্যে সন্ত্রাস নয়, আর্থিক বিশৃঙ্খলা নয়, চাই উন্নয়ন ও শিল্পায়ন।’’
প্রধানমন্ত্রী যখন এ কথা বলছেন, ঠিক তখনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বহু নীতির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। জমি নীতির বিরোধিতার প্রশ্নে সিপিএম বা কংগ্রেসের ক্ষেত্রে বরং দোদুল্যমানতা রয়েছে। কিন্তু জমি নীতির বিরুদ্ধে আমরা প্রথম থেকেই সোচ্চার। কেন্দ্র যেমন রাজ্যকে বাদ দিয়ে চলতে পারে না, তেমন রাজ্যকেও বাংলার দাবিদাওয়া পেশ করতে, তা নিয়ে লড়াই করতেও কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতেই হবে।’’
তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরোধিতায় আমরা অটল। কেন্দ্র যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি করে তবে আমরা তার বিরোধিতা করছি এবং করব। কিন্তু তা বলে প্রধানমন্ত্রীকে কলকাতায় বয়কট করার রাজনীতি করব কেন? মমতা বলেন, উন্নয়ন আর রাজনীতিকে মেলাচ্ছেন কারা? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করলে বলা হবে রাজনৈতিক অসৌজন্য আর দেখা করলে বলা হবে বোঝাপড়া?’’ মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া ও বঞ্চনার ইস্যুগুলি তুলে ধরতে গেলেও তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে হবে!’’
মোদী এবং মমতার একান্ত বৈঠক হবে রাজভবনে। সেখানে দু’জনের মধ্যে যে আলোচনা হবে তাতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ, এমনকী সংসদের আসন্ন জমি বিল নিয়েও কথা হতে পারে। নরেন্দ্র মোদীকে দমদম বিমানবন্দরে মমতা স্বাগত জানাতে না পারলেও পর দিন আসানসোলে হেলিপ্যাডে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। তবে অন্ডাল থেকে ফেরার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে মমতা সম্ভবত হাজির হতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য বোঝাপড়া নিয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস এখন সোচ্চার। কিন্তু রাজ্য বিজেপি নেতারা বলছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র মমতা ও তৃণমূল বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের কথা বলছেন আর মমতা গণতন্ত্রকে হত্যার কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় দায়িত্ব পালন করছেন। এতে কোনও বোঝাপড়ার প্রশ্নই উঠছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা বিজ্ঞান ভবন থেকে সরকারকে বের করে এনে রাজ্যে রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে চাইছি। অসমে ডিজি সম্মেলন আগে কখনও হয়নি। আমরা দিল্লি থেকে এ সম্মেলনকে গুয়াহাটিতে নিয়ে গিয়েছি। কখনও ভাবিনি সে রাজ্যে বিজেপি না কংগ্রেস, কে শাসক দল। কলকাতায় বিমা সংস্থার জাতীয় কর্মসূচি রূপায়ণের অনুষ্ঠান। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আর এক রাজ্যে গিয়ে সেই নীতি রূপায়ণের ঘোষণা করছেন। নানা রাজ্যে নানা মন্ত্রীরা যাচ্ছেন। এটাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রীয় সমন্বয়। মুখ্যমন্ত্রীরা কত কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা সব সময় দিল্লি আসতে পারেন না। কিন্তু আমরাও রাজ্যে রাজ্যে যেতে পারি তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে।’’
প্রশ্ন উঠছে, এই সফরের পর সিবিআই তদন্ত কি আরও লঘু হবে? মুকুল রায়কে নিয়েই বা কী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে? বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘‘কেন্দ্র কেন্দ্রের কাজ করবে। বিজেপি তার কাজ করবে। সিবিআইকে প্রভাবিত করার কাজও দলের নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এক বার কেন, একশো বার বৈঠক হলেও রাজ্য বিজেপি-র শাসক দল-বিরোধী আক্রমণাত্মক রাজনীতি লঘু হবে না। সম্ভবত এই রাজনৈতিক পরিসরের কথা মাথায় রেখে আসানসোলে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বৃহস্পতিবার পৌঁছে গিয়েছেন। শুক্রবার যাচ্ছেন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
তবে মুকুল রায়কে বিজেপি দলে গ্রহণ করতে যে এখনই প্রস্তুত নয়, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিজেপি-র একাংশের প্রশ্ন, মুকুল রায় যদি এখন এক পৃথক দল গঠন করেন তবে তাতেও বিজেপি-র লাভ কি? মুকুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ তাই মোদী-মমতার এই বৈঠকের রাজনীতির মাঝে শূন্যে ঝুলন্ত।