প্রতীকী ছবি।
ব্যাডমিন্টন কোর্টে পানের আসর বসানো হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য আবগারি দফতরের কোনও অনুমতি ছিল না। এমনই অভিযোগে দক্ষিণ কলকাতার লেকের ধারের একটি অভিজাত ক্লাবের বার দু’মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে আবগারি দফতর।
আবগারি দফতরের দাবি, গত ১৩ জুলাই হাতেনাতে ঘটনাটি ধরে ফেলেন তাদের কর্তারা। তার পরেই দু’মাসের জন্য ওই অভিজাত ক্লাবের বার লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, ক্লাবের বার লাইসেন্স বহাল রাখতে চেয়ে সরকারের শীর্ষমহল থেকেও বার বার চাপ দেওয়া হয় আবগারি দফতরে। কিন্তু আবগারি কর্তারা তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড়।
এ নিয়ে জানতে আবগারি কমিশনার রণধীর কুমারকে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসের জবাব দেননি। ক্লাবের সম্পাদক সুব্রত গুহ বলেন,‘‘৮৭ বছরের ইতিহাসে কোনও দিন আমাদের ক্লাব আবগারি নিয়ম ভঙ্গ করেনি। এমন ঘটনা অনভিপ্রেত। খেলার স্থানে আমরা মদের আসর বসাইনি। সরকারের কাছে ক্লাবের বার লাইসেন্স ফের চালু করার আবেদন জানাচ্ছি।’’ এ দিকে কেন লাইসেন্স বাতিল হল, তা জানতে চেয়ে ১৬০০ ক্লাব সদস্যের অনেকেই সরব হয়েছেন। সাধারণ সভা ডেকে কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবও চাইছেন অনেকে।
কিন্তু কেন বাতিল হল বার লাইসেন্স?
আবগারি দফতর সূত্রের দাবি, ১৩ জুলাই ক্লাবের ব্যাডমিন্টন কোর্টে গান বাজনার আসরের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পান-ভোজনের জন্য অস্থায়ী বার লাইসেন্স চেয়ে আবেদন জানায় লেক এলাকার ওই ক্লাব। ২৯ জুনে দাখিল করা সেই আবেদন ১৩ জুলাই অর্থাৎ অনুষ্ঠানের দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাতিল করে দেয় আবগারি দফতর। ততক্ষণে ক্লাব প্রাঙ্গণে অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। ফলে অনুষ্ঠান আর বাতিল হয়নি। খানা-পিনা শুরু হতেই আবগারি দফতরের অফিসারেরা ক্লাবে হানা দেন। তাঁদের দাবি, ক্লাবে গিয়ে দেখা যায় অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও খেলার কোর্টেই মদের আসর বসেছে। তাঁরা সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে ফিরে আসেন। এর পর ক্লাব কর্তৃপক্ষকে শুনানিতে ডেকে ১৯ জুলাই থেকে দু’মাসের জন্য লাইসেন্স সাময়িক ভাবে বাতিল করে দেয় আবগারি দফতর।
ক্লাব সম্পাদক অবশ্য দাবি করেছেন, শেষ সময়ে অনুমতি না মেলায় মুশকিলে পড়েছিলাম। তবে ব্যাডমিন্টন কোর্টে বার খোলা হয়নি। ক্লাবের মূল বার থেকে পানীয় কিনে কেউ কেউ গান শুনে খেলার কোর্টে গিয়েছিলেন। এতে অন্যায়ের কিছু নেই।
অনেকে অবশ্য শুধুমাত্র খানা-পিনার আসরের নেপথ্যে আরও একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছেন। যার সূত্রপাত মাস দুয়েক আগে। রাত ১২টার পরে ওই ক্লাবে মদ বিলি হচ্ছে কি না, তা দেখতে আবগারি কর্তারা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সে দিন। আবগারি দফতরের দাবি, সেই সময় গাড়ি রাখা নিয়ে কোনও ক্লাব সদস্যের সঙ্গে বচসা হয় আবগারি কর্তার গাড়ি চালকের। সেই চালককে ‘হেনস্থা’ করে সংশ্লিষ্ট দুই ক্লাব সদস্য কালীঘাট এলাকায় তৃণমূল পরিবারের দু’জন প্রভাবশালীর নাম করে হুমকি দেন, ওই দুই ‘দাদা’কে জানালেই সবাই ‘শায়েস্তা’ হয়ে যাবে।
ঘটনা এর পরই অন্য দিকে মোড় নেয়। অপমানিত আবগারি কর্তা উপরতলায় বিষয়টি জানান। ঘটনার তদন্ত হয়। ঘটনাচক্রে তার পরেই আসে খেলার মাঠে খানাপিনার আসর। ফলে ব্যবস্থা যা হওয়ার আবগারি দফতর এ ক্ষেত্রে সেটাই নিয়েছে। এবং কিছুটা আপসহীন ভাবেই।
যদিও ক্লাবের সম্পাদক বলেছেন, ‘‘পুরনো ঘটনার সঙ্গে লাইসেন্স বাতিলের কোনও সম্পর্ক নেই। লাইসেন্স বাতিলের যে কারণ দেখানো হয়েছে তাতে এ সব বলা হয়নি।’’
তবে আবগারি কর্তাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ানো ওই সদস্যকে ৪৫ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।