শব্দবাজির দাপট থামবেই, এখনও বিশ্বাস করি আমি

অতীতে এক কালীপুজোর সময়ে শব্দবাজির ফলে শ্রবণযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিন বছর আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি স্বাস্থ্যের উপরে শব্দবাজির ক্ষতিকর প্রভাব সংক্রান্ত যে রিপোর্ট প্রস্তুত করেছিল, তাতে বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা সঞ্জয় ওঝার উল্লেখ ছিল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান ইএনটি চিকিৎসক দুলালচন্দ্র বসু বলেন, ‘‘কানে কম শুনছিলেন সঞ্জয়বাবু। কানে ভোঁ-ভোঁ করছিল তাঁর। শব্দবাজির কারণেই এমনটা হয়েছিল। কতটা ক্ষতি হয়েছিল, তা বিস্তারিত উল্লেখ করে আমরা ওই রিপোর্ট জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে জমা দিয়েছিলাম।’’একটা কালীপুজোর সন্ধ্যা আমার জীবন অনেকটাই বদলে দিয়েছে।

Advertisement

সঞ্জয় ওঝা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪৪
Share:

সঞ্জয় ওঝা

একটা কালীপুজোর সন্ধ্যা আমার জীবন অনেকটাই বদলে দিয়েছে।

Advertisement

বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে সকলে মিলে বাজি ফাটানো হচ্ছিল। হঠাৎ করেই কানের পাশে একটা শব্দবাজি ফাটিয়েছিলেন কেউ। তার পরপরই কান একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সোজা বাংলায় কানে তালা ধরে গিয়েছিল আর কি! প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল, এটা বোধহয় সাময়িক, আস্তে আস্তে সেরে যাবে। অনেক সময়েই তো এমন হয়। বিমানবন্দরে চাকরি করি। অনেক সময়ে বিমানের তীব্র আওয়াজেও কানে অস্বস্তি হয়। এ ক্ষেত্রেও সে রকমই কিছু হয়েছে বলে ভেবেছিলাম।

পরে বুঝলাম, এটা আপনাআপনি সেরে যাওয়ার বিষয় নয়। বেশ কয়েক দিন পরেও কানে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম না। কোনও-কোনও শব্দ যেন হারিয়ে যাচ্ছিল। কেউ কিছু বলছে বুঝতে পারতাম। কিন্তু কী বলছে, সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারতাম না। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানালেন, শব্দবাজির আকস্মিক আওয়াজই এর কারণ। আর এই ক্ষতি সাময়িক নয়। কানে দেওয়ার জন্য একটা ওষুধও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা ব্যবহারের পরেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হল না।

Advertisement

ওই ঘটনার আগে কানে কখনওই কোনও সমস্যা ছিল না। বরাবরই ভাল শুনে এসেছি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই একটা ঝটকা লেগেছিল।

যিনি শব্দবাজি ফাটিয়েছিলেন, তিনি নিশ্চয় ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা করেননি। কিন্তু শব্দবাজির কারণে আমার

জীবনে যে স্থায়ী ক্ষতি হল, তা মেনে নিতে এখনও অসুবিধা হয়। কারণ, ওই ঘটনার পর থেকে কেউ আস্তে অথবা বেশি তাড়াতাড়ি কিছু বললে অনেক শব্দই শুনতে পাই না। বুঝতে অসুবিধা হয়। একাধিক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছি। কিন্তু সকলেই জানিয়েছেন, পুরোপুরি ভাবে আর সারবে না। এমন ভাবেই চলছে। গত কয়েক বছর হল সমস্যাটা যেন বাড়ছে মনে হচ্ছে।

পুজোর মরসুমে আমার মতো আরও অনেক মানুষ শব্দবাজির তাণ্ডবের শিকার হয়ে থাকেন। অনেকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। যাঁরা শব্দবাজি ফাটান, তাঁদের যে অন্যের ক্ষতি করার মানসিকতা থাকে তা নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সেই অনিচ্ছাকৃত কাজের মাসুল গুনতে হয় অন্যকে।

শব্দবাজি রুখতে প্রশাসনিক স্তরে যে সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তাতে আমি খুশি। অন্য রাজ্যে তো

পরিস্থিতি আরও খারাপ। এখানে তা-ও কিছুটা নিয়ম মানা হয়। আগের থেকে শব্দবাজির দাপট অনেকটাই কমেছে। শব্দবাজির আওয়াজে স্বাভাবিক শ্রবণক্ষমতা চলে যাওয়াটা শুধু শারীরিক ক্ষতিই নয়, এটা মানসিক আঘাতও। তবে এ শহরের উপরে আমার বিশ্বাস আছে। নিজে এর শিকার হলেও শব্দবাজির দাপট এক দিন থামবেই, এখনও

বিশ্বাস করি আমি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement