এ রাজ্যে উদ্বৃত্ত আলু, নাজেহাল ঝাড়খণ্ড

পশ্চিমবঙ্গের উদ্বৃত্ত আলুর বোঝা বইতে গিয়ে নাজেহাল ঝাড়খণ্ডের পাইকারি আলু ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বর্ধমানের চাষীরা বাড়তি আলু নিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কেউ ব্যবসায়িক সম্পর্কের জেরে অতিরিক্ত আলু কিনছেনও। কেউ আবার পচে যাওয়ার আশঙ্কায় পত্রপাঠ খারিজ করছেন বঙ্গের চাষীদের অনুরোধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৪:১৪
Share:

এ ভাবেই বুধবার বেশ কয়েক কেজি আলু পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখালেন কোচবিহারের আলুচাষিরা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

পশ্চিমবঙ্গের উদ্বৃত্ত আলুর বোঝা বইতে গিয়ে নাজেহাল ঝাড়খণ্ডের পাইকারি আলু ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বর্ধমানের চাষীরা বাড়তি আলু নিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কেউ ব্যবসায়িক সম্পর্কের জেরে অতিরিক্ত আলু কিনছেনও। কেউ আবার পচে যাওয়ার আশঙ্কায় পত্রপাঠ খারিজ করছেন বঙ্গের চাষীদের অনুরোধ।

Advertisement

আজ দুপুরে রাঁচির পন্ড্রাতে আলুর পাইকারি বাজারে গিয়ে চোখে পড়ল অনেক জায়গাতেই গুদামের সামনে আলু-বোঝাই লরি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনওটি এসেছে বাঁকুড়া, কোনওটি পূর্ব মেদিনীপুর কোনওটি বা পুরুলিয়া থেকে। কিন্তু আলু কেনার লোক নেই। একটি শেডের তলায় বসে হতাশ গলায় মোবাইলে বাঁকুড়ার এক চাষীকে পন্ড্রার পাইকারি ব্যবসায়ী অভিজিৎ কুমার বলছিলেন, “তিনটি গাড়ি শেডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চার প্যাকেটও বিক্রি হয়নি। খদ্দের পেলে কম দামেও বিক্রি করে দেব। কিন্তু না হলে সব যে পচে যাবে!”

পন্ড্রার ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা মতো সেখানে প্রতি দিন কুড়িটি লরি তো বটেই, এমনকী পঁচিশ-ছাব্বিশটি লরিও আলু নিয়ে ঢুকছে। কিন্তু এক দিকে বাজারে সব্জির দাম কমেছে। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গে আলুর দাম কমে যাওয়ায় এ রাজ্যের চাষীরাও স্থানীয় আলু নিয়ে বাজারে গিয়ে বিক্রি করছেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গের আলুর বিক্রিও এ রাজ্যের বাজারে কম হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে বাড়তি আলু কেনার সাহস দেখাতে পারছেন না অনেকেই।

Advertisement

পন্ড্রার আর এক আলু ব্যবসায়ী প্রদীপ গুপ্তের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের আলুই ঝাড়খণ্ডে বেশি বিক্রি হয়। এ রাজ্যের যা চাহিদা সে মতো আলু কেনাও হচ্ছে। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক বাজারের খুচরো আলু বিক্রেতারা কম আলু কিনছেন। ফলে আমরা পশ্চিমবঙ্গের উৎপাদকদের অনুরোধ ফেরাতে শুরু করেছি।”

গত বছর হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঝাড়খণ্ড-সহ ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেখানকার হিমঘর থেকে এ রাজ্যে আলু আনার সময় এখানকার ব্যবসায়ীদের আলুও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আটক করা হয়। ধানবাদের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মনোজ ভগতের বক্তব্য, “যার জেরে ব্যাপক লোকসান হয় এখানকার ব্যবসায়ীদের।” তাঁর কথায়, এ রাজ্যের বড় আলু ব্যবসায়ীরা পশ্চিমবঙ্গে আলু কিনে সেখানকার হিমঘরেই তা রেখে দিতেন। প্রয়োজন মতো সেই আলু বের করে ঝাড়খণ্ডের বাজারে নিয়ে আসতেন। মনোজবাবুর বক্তব্য, “কিন্তু গত বছরের ওই ঘটনার পরে আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকার আলু নষ্ট হয়। ব্যাপক লোকসানের কারণে এ বারে আর হিমঘরে আলু রাখার ঝুঁকি এখানকার অনেক ব্যবসায়ীই নেননি।” প্রয়োজন মতো আলু চাষীদের কাছ থেকে কিনেই ব্যবসা করতে চাইছেন তাঁরা।”

হিমঘরের সুবিধা না পেয়ে এ রাজ্যের আলু ব্যবসায়ীরা রাজ্যের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবসার হিসেব করছেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গের চাষীদের তাঁরা চাইলেও সাহায্য করতে পারছেন না বলেই দাবি বহোরাগোড়ার আলু ব্যবসায়ী দীনেশ মাহাতোর। তিনি জানান, জামশেদপুর, ঘাটশিলার মতো জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের চাষীরাই লরি বোঝাই আলু বিক্রি করতে ঝাড়খণ্ডের পাইকারি বাজারে আসছেন। বিক্রি যেটুকু বা হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা আলুর উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement