সৌরদীপ্ত দাস, অয়ন বসাক, সৈকত দত্ত।
ভুয়ো খবরের দাপট তাঁরা দেখেছিলেন কোভিড-কালে। কী ভাবে মিথ্যে প্রচার, ভুল তথ্য উদ্বিগ্ন পরিজনকে, আশপাশের সকলকেই বিভ্রান্ত করছে অন্য সকলের মতোই তা প্রত্যক্ষ করেছিলেন যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তিন প্রাক্তনী। তার পরেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো তথ্য ধরার উপায় বার করতে উদ্যোগী হন তাঁরা। তার পরেই একটি মডেল তৈরি করেছেন ওই তিন প্রযুক্তিবিদ সৌরদীপ্ত দাস, অয়ন বসাক ও সৈকত দত্ত। এ সংক্রান্ত তাঁদের গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ‘নিউরোকম্পিউটিং’ নামে একটি জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে।
সৌরদীপ্ত ও অয়ন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলি কমিউনিকেশন ও সৈকত কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। তিন জনেই এখন ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। তিন জনে মিলেই তৈরি করেছেন ভুয়ো খবর ধরার ওই মডেল। তাঁরা জানালেন, টুইটারে যে ভুয়ো খবরের স্রোত চলতে থাকে এবং সংবাদ প্রতিবেদনের আকারে যে ভুয়ো খবর পেশ করা হয়, এমন দু’ধরনের ভুয়ো খবরকেই চেনা সম্ভব।
সৌরদীপ্তের কথায়, ‘‘প্রযুক্তির সাহায্যে ওই সমস্ত খবরের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, যেমন শিরোনাম, লেখকের নাম, প্রকাশক, ছবি, কিছু বিশেষ শব্দ চিনে নেওয়া যাবে। সে সব বিশ্লেষণ করেই বোঝা যাবে ওই খবরটির ভুয়ো হওয়ার সম্ভাবনা কতটা।’’ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে জড়িত প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিচার হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর পুরোপুরি ভরসা করছেন না গবেষকরা। কারণ ভুয়ো খবরের নির্মাণ, গড়নও প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। তাই বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তি পুরোপুরি ঠিক নাও বলতে পারে। সৌরদীপ্ত বলছেন, ‘‘প্রযুক্তি ১০০ শতাংশ ঠিক বা ভুল বলতে পারে না। তাই আমাদের মডেলে একটা অনিশ্চয়তার অংশ রয়েছে। যার সাহায্যে কোন খবর ভুয়ো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’’
ভুয়ো খবর ঠেকাতে মানুষ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনের উপরেই জোর দিচ্ছেন তাঁরা। ভুয়ো খবর ধরার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এত বিষয়ে ভুয়ো তথ্য ছড়ায় কেবল প্রযুক্তির পক্ষে তা চেনা কার্যত অসম্ভব। মানব-যুক্তি দিয়ে বিচার করাটাই সবচেয়ে কাজের। আবার, যে বিপুল পরিমাণ ভুয়ো খবরের ঢেউ আছড়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা চেনার মতো লোকবল পাওয়াও অসম্ভব। তাঁদের গবেষণা এই সমস্যার সমাধানের আশায়, জানাচ্ছেন সৌরদীপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘প্রযুক্তির মাধ্যমে যদি একটা প্রাথমিক ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা হলে বোঝাটা কিছুটা হালকা হয়ে যায়। কাজটাও অনেকটা সহজ হতে পারে।’’