শফিউল্লাহ মালিকজ়াদা (মাঝে)। ছবি: ফেসবুক
এ কী করে সম্ভব!
সমাজমাধ্যমে দিন কয়েক আগে পোস্ট হওয়া কয়েকটি ছবি (ছবির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) দেখে এমনটাই মনে হয়েছিল নদিয়ার কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন ছাত্র ও অধ্যাপকের। আঁতকে ওঠার কারণও রয়েছে যথেষ্ট। ছবিতে তাঁরা দেখেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শফিউল্লাহ মালিকজ়াদা আলোচনায় মগ্ন। ছবির ক্যাপশন বলছে, তিনি আলোচনা করছেন নয়া তালিবান জমানায় আফগানিস্তানের কাপিসা প্রদেশের কৃষি বিভাগের প্রধান হজরত মোলাভির সঙ্গে। আর একটি ছবিতে সশস্ত্র তালিব যোদ্ধার সঙ্গে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ‘শফি-ভাই’ (এই নামে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন)।
শফির পরিচিতেরা উদ্বিগ্ন এটা ভেবে, যিনি প্রকৃতি ভালবাসতেন, যিনি এখান থেকে গাছের চারা নিয়ে গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে, পালাবদলের রক্তাক্ত দেশে তিনি এখন কেমন আছেন! পরিচিতেরা জানাচ্ছেন, শফি প্রায়ই বলতেন, এক দিকে নেটো, অন্য দিকে তালিবান— এই দু’য়ের মাঝে পড়ে সাধারণ আফগানবাসীর নাজেহাল অবস্থা। সেই আবেগপ্রবণ যুবক কি তবে তালিবানি জমানায় চাপের মুখে বদলে ফেললেন নিজেকে!
বৃহস্পতিবার রাতে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে শফিউল্লাহ অবশ্য তাঁর ভারতীয় বন্ধুদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, তিনি কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। আফগানিস্তান সরকারের এক কর্মী মাত্র। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘বিভিন্ন দফতরে কর্মী বদল হচ্ছে। সেই সূত্রেই আমার প্রদেশের নতুন কৃষি আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেছি।’
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিকাশচন্দ্র সিংহ মহাপাত্র জানালেন, ২০১৮-র জুলাই থেকে ২০২০-র জুলাই পর্যন্ত শফিউল্লাহ এখানে পড়েছেন। উদ্যান পালন বিভাগের ‘ফ্রুট সায়েন্সে’র এমএসসি-র ছাত্র ছিলেন শফি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ্যা (এনটোমোলজি) বিভাগের প্রাক্তন প্রধান শান্তনু ঝা বলছিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত আলাপ ছিল না। গত বছর লকডাউনের শেষে ও দেশে ফিরে যায়।’’ তিনিও জানাচ্ছেন, শফি ভারতে পড়তে আসার আগে আফগানিস্তানের কৃষি দফতরে কর্মরত ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। দেশে ফিরে যোগ দেন আশরফ গনি সরকারের কৃষি দফতরের উচ্চপদে।
শফি ইংরেজি শিখেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা আফগানিস্তানে একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইদের সময় মুসলিম প্রধান ক্ষুদ্রমোহনপুর গ্রামে গিয়েছিলেন শফিউল্লাহ। সেই গ্রামেরই বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী রিয়াজুল শেখ বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে ইদের সময় ও আমাদের গ্রামে গিয়েছিল।’’