Ex Army Officer

গঙ্গাদূষণ খতিয়ে দেখতে ‘মিশন’ প্রাক্তন সেনাকর্মীদের

গঙ্গায় কোথায় দূষণ কম বা বেশি শুধু সেটুকুই দেখাই নয়, সেই সঙ্গে এলাকা ভেদে গঙ্গাদূষণের ছবির ‘জিও ট্যাগিং’ও করছেন তাঁরা।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:০৯
Share:

ব্যারাকপুরে গঙ্গার ধারে আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে ব্যস্ত প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। ছবি: মাসুম আখতার

পদব্রজে যাত্রা শুরু হয়েছে প্রয়াগরাজ থেকে। গঙ্গাসাগর হয়ে ফিরতি পথে গোমুখ পৌঁছবেন তাঁরা। গঙ্গার দূষণ-চিত্র খতিয়ে দেখার উদ্দেশে দীর্ঘ আট মাস এ ভাবেই হেঁটে চলার পরিকল্পনা রয়েছে যে দলটির, তার অধিকাংশ সদস্যই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। গঙ্গার দূষণ নিয়ে এ ভাবেই অভিযান চালিয়ে তার পরে সেই রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

Advertisement

গঙ্গায় কোথায় দূষণ কম বা বেশি শুধু সেটুকুই দেখাই নয়, সেই সঙ্গে এলাকা ভেদে গঙ্গাদূষণের ছবির ‘জিও ট্যাগিং’ও করছেন তাঁরা। কোথায়, কী ভাবে গঙ্গার জলে মিশছে বর্জ্য বা দূষিত জল— ‘জিও ট্যাগিং’য়ের মাধ্যমে দিল্লিতে বসেও উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। বিচ্ছিন্ন ভাবে এমন কাজ আগে হলেও গঙ্গার পুরো যাত্রাপথ জুড়ে এমন কাজ আগে কখনও হয়নি বলে দাবি ওই দলটির। এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ব্যারাকপুরের বিভিন্ন ঘাট ঘুরে দেখেছেন ওই দলের সদস্যেরা। গঙ্গার পাড়ে পড়ে থাকা জঞ্জাল সাফাইয়েও হাত লাগিয়েছেন তাঁরা। রবিবার তাঁরা পৌঁছেছেন কলকাতায়। বাগবাজার চত্বরে রাত কাটিয়ে আজ, সোমবার তাঁরা এগোবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিকে।

প্রয়াগরাজের বাসিন্দা, প্রাক্তন সেনা আধিকারিক মনোজ কেশওয়ারের (যিনি কর্নেল মাইক নামেই বেশি পরিচিত) নেতৃত্বে গঙ্গার দূষণ খতিয়ে দেখার কাজ করছে এই দলটি। কর্নেল মাইক বলছেন, “কর্মজীবনে দেশের সেবা করেছি। অবসরের পরেও তাই দেশের জন্য কিছু করার তাগিদেই এই কাজ করছি। গত দু’হাজার বছরে গঙ্গা এক রকম ছিল। কিন্তু গত ১০০ বছরে গঙ্গার দূষণ-চিত্র বদলেছে পুরোপুরি।” তাঁদের এই কর্মকাণ্ডের নাম দিয়েছেন ‘অতুল্য গঙ্গা মিশন’।

Advertisement

কী ভাবে কাজ করছেন এই দলের সদস্যেরা? কর্নেল মাইক জানালেন, গত ১৬ ডিসেম্বর তাঁরা গঙ্গার পাড় ধরে হাঁটতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গার জলে দূষণের মাত্রা মাপছেন তাঁরা। কোন এলাকায় গঙ্গায় কোন নালা বা নদী মিশেছে বা সেখানকার জলের গুণগত মান কেমন— তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। যেখানে দূষণের মাত্রা অনেকটা বেশি, সেখানে তার কারণও জানার চেষ্টা করছেন। শহর বা কলকারখানার দূষিত জল কোথাও সরাসরি গঙ্গায় এসে মিশলে সেই জায়গাটিকে ‘জিও ট্যাগিং’য়ের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে পরবর্তীকালে সহজেই সেই এলাকাটি খুঁজে বার করা যায়।

দলের সদস্যেরা বলছেন, অত্যধিক হারে দূষণের সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গার আরও একটি সমস্যা হল এর নাব্যতা হ্রাস। এর ফলে নদীর বাস্তুতন্ত্রও বিপদের মুখে পড়ছে। এই দলের সদস্যেরা মনে করছেন, এর মূল কারণ মানুষের অসচেতনতা। তাই সাধারণ মানুষকে এ নিয়ে সচেতন করতে বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়াদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজনও করেছেন তাঁরা। কর্নেল মাইক জানাচ্ছেন, তাঁদের দলের কয়েক জন সদস্য খানিক এগিয়ে গিয়েছেন এবং তাঁরা গঙ্গার দু’ধারে গাছের চারা পুঁতছেন। সেই সব গাছ দেখভালের দায়িত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের উপরেই। কর্নেল মাইকের কথায়, “সব ঠিকঠাক চললে দু’বছর পরে উপগ্রহ চিত্রে গঙ্গার দুই তীর সবুজ লাগবে।”

গঙ্গা-দূষণ নিয়ে এই অভিযানে বেরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে পেয়েছে এই দল। সদস্যদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন স্থানীয়েরাই। গত বৃহস্পতিবার কাঁচরাপাড়ায় গঙ্গার ধারে তাঁবু খাটিয়ে ছিলেন তাঁরা। সেখানে স্থানীয় একটি পর্বতারোহণ ক্লাব তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। সেই ক্লাবের তরফে মৃগাঙ্ক দাস বলেন, “বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তাঁদের মাধ্যমেই এই অভিযানের কথা জানতে পারি। আমরাও তাতে শামিল হয়েছি। আমাদের পরিচিতদেরও বলছি। এ ভাবেই তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে।” গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে শুক্রবার ব্যারাকপুরে এই দলের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল সেনা-ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ।

গঙ্গার পাড় ধরে যতই এগোচ্ছেন কর্নেল মাইকেরা, ততই তাঁদের দলে সদস্য সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সেই দলে যেমন রয়েছেন গুজরাতের চাষি হিরেন পটেল, তেমনই রয়েছেন পড়ুয়া, ব্যবসায়ী সকলেই। এলাকা ভাগ করে, দু’টি দলে ২৫ জন করে সদস্য কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কর্নেল মাইক জানান, এই অভিযানের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের প্রস্তাব ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement