বিজেপির নবান্ন অভিযানে শামিল বলবিন্দর সিংহকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। খুলে গিয়েছে পাগড়ি। এই পাগড়ি খোলা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
আমি সত্যিই ভাবতে পারছি না, এটা কোনও বিতর্কের বিষয় হতে পারে! প্রায় ৩৫ বছর পশ্চিমবঙ্গেই চাকরি করেছি। পুলিশ জীবনে কয়েকশো এ রকম আইনঅমান্য, রাজনৈতিক কর্মসূচি সামলেছি। কিন্তু কোনও দিন পুলিশের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ উঠতে দেখিনি।
বিজেপির নবান্ন অভিযানে শিখ যুবকের পাগড়ি ‘খোলা’ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার আঁচ আমি বাংলা থেকে অনেক দূরে চণ্ডীগড়ে বসেও টের পাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ ভাইরাল হয়েছে ওই যুবকের ‘পাগড়ি খোলা’ ছবি।
খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলাম, ওই যুবক বিজেপির নবান্ন অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জমায়েতের মধ্যে ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের নজর পড়ে তাঁর আগ্নেয়াস্ত্রের দিকে। খুব সঙ্গত কারণেই সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাঁকে বাধা দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের টুইট করা একটা ভিডিয়োও দেখলাম। নিজের চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ওই যুবক নিশ্চয়ই পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি। বাধা দিয়েছিলেন পুলিশকর্মীদের। সেখান থেকে একটা ধস্তাধস্তি হয়েছে। ওই যুবককে যে পুলিশকর্মী নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি ইচ্ছে করে তাঁর পাগড়ি খুলে দিয়েছেন— ভিডিয়ো দেখে আমার কোথাও তা মনে হয়নি। বরং স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ধস্তাধস্তিতে আগেই পাগড়ি ঢিলে হয়ে গিয়েছিল। সেটা আপনা আপনিই খুলে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: পাগড়ি বিতর্কে ব্যবস্থা নিতে মমতাকে আর্জি অমরিন্দর, সুখবীরের
শুনলাম, অনেকে টুইট করে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, শিখদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। আমি নিজে শিখ। এক জন প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকও বটে। এই দুই পরিচয় মাথায় রেখেই বলছি, এখানে কোনও ভাবে কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়নি। আমার নিজের জীবনে এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি হঠাৎ হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। আমরা লাঠি চালিয়েছি। এ রকম অনেকের পাগড়িই তখন খুলে গিয়েছে। কিন্তু তখন এই ঘটনা নিয়ে এ রকম ‘রাজনীতি’ করতে দেখিনি কাউকেই। জনতার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তো আমার নিজের পাগড়িও খুলে গিয়েছে বেশ কয়েক বার। এটা তো খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা। পুলিশ তাড়া করছে। ধস্তাধস্তি হচ্ছে। লাঠি-টিয়ার গ্যাস চলছে। তার মধ্যে পুলিশ কাউকে ধরতে গেল। সে বাধা দিল। তার মধ্যে পাগড়ি খুলে গেল। আমরা যে পাগড়ি পরি তা খুব আঁটোসাটো হয় না। হালকা টানেও খুলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত প্রধান দলিত, তাই সরকারি মিটিং-এ জায়গা হল মাটিতে
আচ্ছা এ সব বাদ দিন। খোদ পঞ্জাবের কথা বলছি। গোটা পঞ্জাব জুড়ে তো গত কয়েক দিন ধরে কৃষকদের একের পর এক বিক্ষোভ চলছে। তাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে। পুলিশ জলকামান ব্যবহার করছে। লাঠি চালাচ্ছে। পুলিশের তাড়ায় বিক্ষোভকারীদের পাগড়ি খুলে যাচ্ছে। কখনও তাড়ার চোটে পাগড়ি ফেলেই পালাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। এ তো রুটিন ঘটনা। আমার খুব খারাপ লাগছে, যে রাজ্যে আমি এত বছর চাকরি করে এলাম, সেখানে এ রকম একটা খুব স্বাভাবিক ঘটনাকে ঘিরে এমন বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। আমি এখনও মনে করি, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশ এ রকম কোনও কাজ করতে পারে না, যাতে কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগবে। এই ব্যাপারে তারা খুব সচেতন।
(লেখক পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের অগস্ট পর্যন্ত তিনি রাজ্যের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্তার দায়িত্ব সামলেছেন। চাকরি জীবনে রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে চণ্ডীগড়ে থাকেন।)