প্রকাশ্যে: চম্পাহাটির হারাল এলাকায় শুকোচ্ছে শব্দবাজি। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
হারালে ঢোকার মুখেই থমকে দাঁড়াতে হবে। সার সার বাজির দোকান— সব বন্ধ। চার দিকে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। দেখে মনে হবে, পড়শি জেলায় সম্প্রতি ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরে বুঝি থমকে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির এই বাজি মহল্লাও।
ভুল ভাঙল দ্রুতই। গ্রামের ভিতরে কিছুটা ঢুকতেই দূরে গাছগাছালির আড়ালে চোখে পড়তে শুরু করল সন্দেহজনক গতিবিধি। বাইরের লোক দেখেই যেন সরে যাচ্ছেন কেউ। চুপিসারে তাঁদের পিছু নিয়ে রাস্তা ছেড়ে জঙ্গল ভেঙে এগোতেই মিলল গোপন কারখানার খোঁজ। পোলট্রির খামারের মতো সার সার ঘরে চলছে শব্দবাজি তৈরি। গাছগাছালি আর লম্বা ঘাসের জঙ্গলে ঢাকা থাকায় বাইরে থেকে এই সব কারখানা তেমন চোখে পড়বে না। বোঝা গেল, দত্তপুকুরের ঘটনাতেও হারালে নিষিদ্ধ বাজি তৈরিতে লাগাম পড়েনি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এমন প্রচুর কারখানা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আশপাশে। ওই এলাকাতেই চোখে পড়ল গোটা তিনেক কারখানা। সবগুলির ভিতরেই বস্তা বস্তা বাজি মজুত করা, সামনে খোলা জায়গায় শুকোচ্ছে কয়েকশো বাজি। কারখানার ভিতরে পড়ে থাকা বারুদের খোল, বাজি বাঁধার সুতোর বান্ডিল দেখে বোঝা গেল, কাজ চলছিল কিছু ক্ষণ আগেও। বাইরের লোকজন আসতে দেখে সব ফেলে সবাই পালিয়েছেন। অনেক খুঁজেও সেই শ্রমিকদের আর খোঁজ মিলল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বললেন, “সামনেই কালীপুজো। তাই দু’-এক জন হয়তো লুকিয়ে চুরিয়ে কাজ শুরু করেছেন। আসলে এই বাজির চাহিদাই সব চেয়ে বেশি তো! তাই পেট চালাতে কেউ কেউ তৈরি করেন।” তিনি আরও বলেন, “এই বাজি নিষিদ্ধ ঠিকই। যাঁরা করছেন, অন্যায় করছেন। কিন্তু, এই বাজির মশলা থেকে অত বড় বিস্ফোরণ হওয়া সম্ভব নয়। আনন্দে মানুষ যে বাজি ফাটায়, সেই বাজিতে এত প্রবল বিস্ফোরণ হয় না।”
মাস তিনেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনার পরে চম্পাহাটিতে বাজি তৈরি ও বিক্রি অনির্দিষ্ট কালের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। সরকারি ভাবে সেই নিয়ম এখনও বলবৎ রয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, কালীপুজোর আগে সম্প্রতি আবার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু দত্তপুকুরের ঘটনার পরে ফের অধিকাংশ দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার বারুইপুর পুলিশ জেলার তরফে বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস, আইসি সৌম্যজিৎ রায় অভিযান চালান হারালে। বেশ কিছু নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হয়। পরে গ্রামের ভিতরে ওই কারখানাগুলি থেকেও প্রচুর শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এসডিপিও বলেন, “নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কিছু বাজি উদ্ধার হয়েছে। এমন অভিযান আগামী দিনেও চলবে। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।”
চম্পাহাটি বাজি ব্যবসায়ী সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক সুধাংশু দাস বলেন, “সকলকে নিয়ম মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে। কোনও বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না।”