প্রতীকী ছবি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই-সহ নানা বিরোধী দল। ওই বৈঠককে উপলক্ষ করে এ বার তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে ‘দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি’র অভিযোগকে পাল্টা হাতিয়ার করল বঙ্গ বিজেপি। তাদের দাবি, বাংলায় সিপিএম বা কংগ্রেস তৃণমূলের বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলনের ছবি দেখালেও আদতে পর্দার পিছনে তারা ‘বন্ধু’! রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান ও একমাত্র বিরোধী বিজেপিই। তৃণমূল এবং সিপিএম অবশ্য বিজেপির এই দাবি নস্যাৎ করে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে বিষয়টি দেখার কথা বলছে।
দিল্লিতে তৃণমূল নেত্রীর ডাকা বৈঠকে কংগ্রেস এবং সিপিএম হাজির থাকার পরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই সংক্রান্ত একটি ব্যঙ্গচিত্র টুইটে পোস্ট করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘দিদি বলতেন, জগাই-মাধাই-বিদাই তিন ভাই। পর্দার আড়ালে হাতে হাত মিলিয়ে তারা তৃণমূলের পিছনে লাগে। এখন দিদিই বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন লড়বেন! বাংলার লোকে যদি বলে বাংলায় কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি, তাদের কী জবাব দেবেন’? মমতা যে বিভিন্ন সময়ে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হয়েছেন, সেই দিকে ইঙ্গিত করেই পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন শুভেন্দু। অগ্নিমত্রা পালের মতো বিজেপি বিধায়কেরাও বলছেন, ‘‘দিল্লিতে মমতার পাশে বসে বৈঠক করতে, চা খেতে আপত্তি নেই বাম নেতাদের। বিজেপি-বিরোধিতার নামে দুর্নীতিগ্রস্ত দলেরা একজোট!’’
রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে উপনির্বাচন বা পুরভোটে বিজেপির ভরাডুবি অব্যাহত। গেরুয়া শিবিরের সনস্যা আরও বাড়িয়েছে দলের অন্দরের বিরোধ। উল্টো দিকে, রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসরে চোখে পড়ার মতো জমি পুনরুদ্ধার করেছে বামেরা। রাস্তার আন্দোলনেও তারা বিজেপির চেয়ে অনেক এগিয়ে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এই প্রেক্ষিতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিরোধীদের বৈঠককে দেখিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ ফেরানোর চেষ্টা করছে বিজেপি।
বিজেপির প্রচারের পাল্টা তৃণমূলের নেতা তাপস রায় বলেছেন, ‘‘প্রেক্ষিতটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন প্রশ্নটা দেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, অর্থনীতি, বিদেশনীতি বাঁচানোর, তখন দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কাজটাই করছেন। সব ব্যাপারে দলীয় রাজনীতিতে অভ্যস্ত যারা, তারা এ ভাবে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে পারবে না!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘দেশের সামনে সব চেয়ে বড় বিপদ বিজেপি এবং তার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সব শক্তির একজোট হওয়ার ডাক আমরা দিয়েছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সেই প্রেক্ষিতেই বৈঠক রয়েছে। বাংলায় যেমন আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের বিরোধ, তেমনই কেরলে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক বিরোধিতার। কিন্তু জাতীয় পরিপ্রেক্ষিতকে রাজ্য রাজনীতির সমীকরণে সব সময় দেখলে চলে না।’’ সুজনবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এ রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলবে। তাঁদের আর কোন কোন নেতা নেতা তৃণমূলে যাবেন, বিজেপি নেতারা বরং সেটা ভাবুন!’’ জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী সমঝোতার গুরুত্ব যে আলাদা, সে কথা বলছেন কংগ্রেস নেতারাও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।