ODF Project

হুঁশিয়ারি, তবু উন্মুক্ত শৌচ মুক্তিতে হোঁচট

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না-হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে পুরসভাকে।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫৭
Share:

ফাইল চিত্র।

মন্ত্রীর চিঠিতেও কি হুঁশ ফিরছে না! তা না-হলে কেন এখনও উন্মুক্ত শৌচ মুক্তি প্রকল্প (ওডিএফ) নিয়ে গয়ংগচ্ছ মনোভাব? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। কারণ, এখনও রাজ্যের ৩৫-৩৬টি পুরসভা লক্ষ্যমাত্রার ওই প্রকল্প রূপায়ণের ৯০ শতাংশেও পৌঁছতে পারেনি।

Advertisement

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না-হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে পুরসভাকে। প্রয়োজনে ওডিএফ প্রকল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বরাদ্দ বন্ধের ইঙ্গিত ছিল পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চিঠিতে। রাজ্যের ৪০টি পুরসভায় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ওই চিঠি পৌঁছে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করে তার রিপোর্ট পাঠাতে হবে।

পুরমন্ত্রীর চিঠির পরে ১২৫টি পুরসভার মধ্যে মাত্র চার-পাঁচটি পুরসভা এই প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছে। ওই চার-পাঁচটি পুরসভায় কয়েকটি করে শৌচালয়ের নির্মাণ বাকি আছে। আরও ১০টি পুরসভায় ৯০ শতাংশের (বাকি ২৫-৩০টি) বেশি কাজ হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সব মিলিয়ে কেন্দ্রের মাপকাঠিতে রাজ্যের ৫১টি পুরসভায় উন্মুক্ত শৌচ মুক্তি প্রকল্পের কাজ বাকি ছিল বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। সেই কাজ শেষ করতে চার বার (৭ ডিসেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর, ৩১ ডিসেম্বর এবং ৩১ জানুয়ারি) সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। কিন্তু লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি পুরসভাগুলি।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে কাজ বাকি থাকা পুরসভার শৌচালয় নির্মাণ ও জিয়ো ট্যাগিং হবে, সেই বিষয়ে সোমবার ভিডিয়ো-সম্মেলনে জেলাশাসকদের সঙ্গে আলোচনা বৈঠক করেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব

সুব্রত গুপ্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং জিয়ো ট্যাগিং করে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট দিতে এদিনের ভিডিয়ো-বৈঠকে জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে পুর দফতর। যদিও ওডিএফ প্রকল্পে কাজ বাকি থাকা পুরসভার হয়ে এ দিনের বৈঠকে ব্যাট করেছেন কয়েক জন জেলাশাসক। তাঁদের দাবি, কমিউনিটি শৌচালয় এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে শৌচালয়ের কাজ হয়েছে। তাই যতটা বাকি রয়েছে বলে জানানো হচ্ছে, তা ঠিক নয়।

যদিও পুর দফতরের কর্তাদের মতে, এমন দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে অনেক জেলা প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নির্দেশ, শৌচালয় (অন্য উন্নয়ন প্রকল্প ও কমিউনিটি শৌচালয়) হয়ে গিয়ে থাকলেও নির্দিষ্ট পদ্ধতি জিয়ো ট্যাগিং না-করলে তা সম্পূর্ণ বলে ধরা হবে না। কারণ, দাবি আর বাস্তবতার মধ্যে চায়ের কাপ আর ঠোঁটের ফারাক থেকে যায়।

পুরমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরেও উন্মুক্ত শৌচ মুক্তির প্রকল্পের এই হাল কেন?

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, চিঠিতে ওডিএফ প্রকল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাদ্দ বন্ধের হুঁশিয়ারি ছিল। কিন্তু পুরোপুরি বরাদ্দ বন্ধ হয়নি। তাই হয়তো গা-ছাড়া মনোভাব রয়েছে ওই সব পুরসভার। অনেক ক্ষেত্রে পুর দফতর নিয়োজিত সংস্থা (তৃতীয় পক্ষ) পুরসভায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের দেখা পাচ্ছেন না, কাগজপত্রও ঠিকমতো মিলছে না বলে অনুযোগ।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৯৩টি পুরসভায় ওয়ার্ড সংরক্ষণের খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। অন্যও ১৭টি পুরসভার ওয়ার্ড সংরক্ষণ আগেই হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুরসভার মেয়র বা চেয়ারম্যানেরা

ভোটের কাজে ব্যস্ত। তাই হয়তো অফিসে তাঁদের দেখা মিলছে না। কিন্তু মন্ত্রীর চিঠিও যদি তাঁদের কাছে ‘গুরুত্বহীন’ হয়ে যায়, তা হলে বলতে হবে, বিষয়টি যথেষ্টই চিন্তার। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ওই ৪০টি পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করার কথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement