প্রতীকী ছবি।
জোড়া বিজ্ঞপ্তির পরেও ‘স্টাফ প্যাটার্ন’ বা শিক্ষক-শিক্ষিকার বণ্টন বিন্যাস নিয়ে জটিলতা কাটছে না। এই নিয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার অভিযোগ, স্টাফ প্যাটার্ন নিয়ে শিক্ষা দফতরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। সেই জন্যই নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে শিক্ষকদের মধ্যে। সল্টলেকে বিকাশ ভবনে গিয়ে শিক্ষা দফতরে স্মারকলিপিও পেশ করেছে বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন।
কোন স্কুলে কত শূন্য পদ রয়েছে, তা দেখতে শিক্ষা দফতর বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের ‘স্টাফ প্যাটার্ন’ বা শিক্ষক-শিক্ষিকা বণ্টন বিন্যাসের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেয়। প্রধান শিক্ষকেরা অনলাইনে সেই স্টাফ প্যাটার্ন দাখিল করতে গেলেই নানা বিপত্তি দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
স্টাফ প্যাটার্ন নিয়ে শিক্ষা দফতরের প্রথম বিজ্ঞপ্তি বেরোয় ১৬ সেপ্টেম্বর। সেই বিজ্ঞপ্তিতে নানান অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে শিক্ষকেরা প্রতিবাদে সরব হন। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন জানাচ্ছে, শিক্ষক শিবিরের ব্যাপক ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তির কিছু অংশ সংশোধন করে ৩১ অক্টোবর আবার বিজ্ঞপ্তি দেয় শিক্ষা দফতর। কিন্তু শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন বিজ্ঞপ্তির পরেও এই বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।
শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা অনলাইনের মাধ্যমে স্টাফ প্যাটার্ন দাখিল করতে গিয়ে দেখছেন, নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অন্য বিষয় পড়ানোর জন্য স্থানান্তরিত করতে হচ্ছে। অন্যথায় অনেক শিক্ষক উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছেন। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা উদ্বৃত্ত হিসেবে থেকে যাচ্ছেন, তাঁদের বদলি করা হবে কি না, নতুন ব্যবস্থায় সেটা পরিষ্কার নয়। ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রবল আশঙ্কায় ভুগছেন।’’ শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতে বিদ্যালয়গুলিতে ওই সব পদে শিক্ষক না-পাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ। কিঙ্করবাবুর মতে, এর ফলে অচিরেই শিক্ষক-সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে অনেক স্কুল।
নতুন বন্দোবস্তের ফলে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা পদাবনতির সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সৌরেন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নতুন স্টাফ প্যাটার্নে মাধ্যমিকে স্তরে নিযুক্ত অনেককে উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ফলে তাঁদের পদের অবনমন হচ্ছে। এমনকি স্কুলের শিক্ষকের বিষয়ও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।’’
শিক্ষা দফতরের কর্তাদের আশ্বাস, এই বিভ্রান্তি শীঘ্রই দূর হবে। বিভিন্ন জেলার স্কুল পরিদর্শকদের সঙ্গে বিকাশ ভবনের শিক্ষা দফতরের কর্তারা ভিডিয়ো-সম্মেলন করে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কিছু দিনের মধ্যেই নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি। কিন্তু শিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, শুধু বিজ্ঞপ্তি দিলে এই বিভ্রান্তি কোনও ভাবেই কাটবে না। তাদের দাবি, সমস্যার মোকাবিলায় স্টাফ প্যাটার্ন নিয়ে আন্দোলনকারী সব শিক্ষক সংগঠনকে শিক্ষা দফতরে ডেকে একটি ওয়ার্কশপ বা কর্মশালা অথবা আলোচনাসভার আয়োজন করা হোক।