পর্যটকদের তো বটেই, স্থানীয়দেরও পছন্দের জায়গা হাজারদুয়ারির সামনে সবুজ ঘেরা মাঠ। সেখানে বসে গল্পগুজব থেকে প্রেমালাপ অথবা প্রাতর্ভ্রমণ— সবই চলে। প্রতীকী ছবি।
ফুরসত পেলেই অনেকেই সময় কাটাতে চলে আসেন হাজারদুয়ারির মাঠে। সেখানে বসেই চলে জমাটি প্রেম। তবে নবাবের জেলায় নয়া নিয়মে এ বার বোধ হয় তা-ও বন্ধ হতে পারে। কারণ, হাজারদুয়ারির মাঠে ঢুকতে গেলে এ বার থেকে টিকিট কাটতে হবে।
মুর্শিদাবাদে ঘুরতে আসা পর্যটকদের তো বটেই, স্থানীয়দেরও পছন্দের জায়গা হাজারদুয়ারির সামনে সবুজ ঘেরা মাঠ। সেখানে বসে গল্পগুজব থেকে প্রেমালাপ অথবা প্রাতর্ভ্রমণ— সবই চলে। এত দিন হাজারদুয়ারিতে ঢোকার জন্য টিকিট লাগলেও সেখানকার মাঠে ঢুকতে গেলে কানাকড়ি খরচ করতে হত না। তবে ১ নভেম্বর থেকে সে নিয়মে বদল এসেছে। এ বার থেকে মাঠে ঢোকার জন্যও কাটতে হবে টিকিট। এমনই নয়া নিয়ম চালু করেছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই) বিভাগের রায়গঞ্জ শাখা। পুরাতত্ত্ব বিভাগ জানিয়েছে, হাজারদুয়ারির মাঠে ঢুকতে গেলে অনলাইন টিকিটের জন্য খরচ ২০ টাকা এবং অফলাইন টিকিট পাওয়া যাবে ২৫ টাকায়। মঙ্গলবার থেকে অফলাইন টিকিট বিক্রির পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা শুরু হয়েছে। অনলাইনে কাটা টিকিটে লেখা, মিউজিয়াম চার্জ- শূন্য, আর্কিলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া চার্জ- ২০ টাকা। অন্য দিকে, এ সবের সঙ্গে অফলাইন টিকিটের জন্য ৫ টাকা। ফলে অফলাইন টিকিট ২৫ টাকার। ১ নভেম্বর একটি নির্দেশিকায় এই নতুন নিয়ম কার্যকর করার কথা জানিয়েছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ। তাতে বিপাকে পড়েছেন বহু কলেজপড়ুয়া।
প্রতিমা সেন এবং অনুভব মুখোপাধ্যায় (দু’টি নামই পরিবর্তিত) বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের পড়ুয়া। মঙ্গলবার ফুরসত মিলতেই দু’জনে হাজারদুয়ারির মাঠে ঢুকতে গিয়েছিলেন। তবে সেখানকার এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁদের কাছ থেকে টিকিট চাইতেই হতবাক যুগল। অনুভব বলেন, ‘‘টিকিট কাটতে হবে বলে সিনেমায় যাওয়া হয় না আমাদের। তাই এই মাঠকে বেছে নিয়েছিলাম। এ বার এখানেও টিকিট?’’ একই সুর শোনা গিয়েছে জিয়াগঞ্জ রানি ধন্যাকুমারী কলেজের এক ছাত্রী সাহানা সেনের কণ্ঠেও। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তার কথা ভেবে যেখানেসেখানে যেতে পারি না। এই মাঠটাই ছিল আমাদের (প্রেমিকের নাম বলেননি) দেখা করার একমাত্র ভাল জায়গা।’’ তাঁর আবেদন, ‘‘সব দিক বিবেচনা করে অন্তত কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের ছাড় দেওয়া হোক। নইলে তো প্রেম করাই বন্ধ হয়ে যাবে!’’
শুধু অনুভবরাই নন, নতুন নিয়মে আপত্তি রয়েছে আরও অনেকের। এ নিয়মের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ত্ব মন্ত্রকে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন নবাব পরিবারের সদস্যরা। ওই পরিবারের সদস্য তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফাহিম মির্জা বলেন, ‘‘সকাল-বিকেল যাঁরা মর্নিংওয়াক করার জন্য মাঠে যান, এই নতুন নিয়মে তাঁদের সমস্যা হবে।’’ যদিও হাজারদুয়ারির সুপারিন্টেনডেন্ট হরিওম শারণে দাবি, ‘‘মাঠে আড্ডাবাজি হচ্ছিল। এখানে নেশাও করতেন অনেকে। সেগুলো বন্ধ করার জন্য এই পন্থা নেওয়া হয়েছে। তবে ধর্মীয় কাজে যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য দরজা সর্বদা খোলা। মর্নিং ওয়াকের জন্য সকালবেলায় টিকিট লাগবে না। কিন্তু বেলা ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত ঢুকতে গেলে প্রবেশমূল্য দিতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনস্থ যে কোনও মিউজিয়াম চত্বরে প্রবেশ করলে তার মূল্য দিতে হয়, মিউজিয়ামে কোনও প্রবেশমূল্য থাকে না।’’
এত দিন পরে হঠাৎ করে এ রকম নিয়ম চালু হল কেন? প্রশ্ন তুলেছেন মুর্শিদাবাদ নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা। এই নিয়ম চালু হওয়ায় বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটকের একাংশও।