Enforcement Directorate

Partha Chatterjee: ‘সময়মতো সঠিক তথ্য’, এই প্রথম তদন্তে সহযোগিতার ইঙ্গিত পার্থের, দাবি ইডি সূত্রে

তদন্তকারী অফিসারদের একাংশের মতে, একেবারে সরে না গেলেও দল পুরোপুরি পাশে দাঁড়ায়নি বলে মনে হয়ে থাকতে পারে পার্থের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২২ ০৬:০৩
Share:

ফাইল চিত্র।

গোড়া থেকেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে অভিযোগ ছিল, তদন্তে সে ভাবে সহযোগিতা করছেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ‘জানি না’, ‘বলতে পারব না’ আর ‘মনে করতে পারছি না’— যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর আটকে থাকছিল মূলত এই তিন শব্দবন্ধে। কিন্তু মঙ্গলবার এই প্রথম কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী) জানিয়েছেন যে, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করতে চান। সময়মতো সমস্ত তথ্য তদন্তকারীদের সামনে আনার কথাও নাকি ইডি-র অফিসারদের বলেছেন তিনি।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, ইডি সূত্রে দাবি, এ দিন পার্থকে স্কুলে নিয়োগে কার কার কাছ থেকে সুপারিশ পেয়েছিলেন প্রশ্ন করা হলে, মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিল, ‘‘সর্বস্তর থেকে সুপারিশ আসত।’’ যদিও তাঁরা কারা, তা এখনও খোলসা করেননি তিনি। তদন্তকারী কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শুক্রবার থেকে টানা ধকল গিয়েছে মন্ত্রীর। সোমবার সকালে ভুবনেশ্বর-এমসে (অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স) গিয়ে মঙ্গলবার সকালেই কলকাতা ফিরতে হয়েছে। এ বার কিছুটা বিশ্রামের পরে তিনি যাবতীয় প্রশ্নের ‘সঠিক’ জবাব ঠিক সময়ে দেওয়ার ‘প্রতিশ্রুতি’ দেন বলে ইডি সূত্রে দাবি।

তদন্তকারী অফিসারদের একাংশের মতে, একেবারে সরে না গেলেও দল পুরোপুরি পাশে দাঁড়ায়নি বলে মনে হয়ে থাকতে পারে পার্থের। তার উপরে সমস্যা বেড়েছে ৩ অগস্ট পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশে। সঙ্গে এত বড় ‘কেলেঙ্কারি’ সামনে আসার মানসিক চাপ। এই সবের মিলিত কারণেই মন্ত্রী এমন তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে তাঁদের ধারণা।

Advertisement

এ দিন দুপুরে ও সন্ধ্যায় ঘণ্টা খানেকের বিরতি দিয়ে পার্থকে প্রশ্ন করেছেন তদন্তকারীরা। একাধিক সোফা এক জায়গায় এনে তাঁকে ঘিরে কনফারেন্স রুমের একটি অংশেই তৈরি হয়েছে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জায়গা। কিন্তু ইডি সূত্রে দাবি, শিক্ষা-দুর্নীতির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই পার্থ কখনও বলেছেন, ‘সব কিছু খেয়াল রাখা যায় না’, তেমনই কখনও জানিয়েছেন, ‘কোনও কিছু ঘটলেও ঘটে থাকতে পারে।’ কখনও আবার নাকি তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘অনেক কিছুই তো নজর এড়িয়ে যায়। পরে প্রকাশ্যে এলে, বোঝা যায় যে

দুর্নীতি হয়েছে।’ এই সমস্ত উত্তর এবং সেই সঙ্গে ঠিক সময়ে সঠিক তথ্য সামনে আনার কথা বলাকে এখন তাই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন ইডি কর্তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে ফেরার কথা থাকলেও, এ দিন ভোরের বিমানে কলকাতা ফিরিয়ে আনা হয় পার্থকে। হুইলচেয়ারে বসে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বার হওয়ার মুখে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের দেখে আশপাশে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘একটু গার্ড করো।’’ কিন্তু তার মধ্যেও ধেয়ে আসে প্রশ্ন— ‘মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দলের কেউ অন্যায় করলে, তাঁকে রেয়াত করা হবে না। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?’’ উত্তর না এড়িয়ে বরং খানিকটা গলা চড়িয়ে পার্থের জবাব, ‘‘ঠিকই বলেছেন।’’ এর আগে ভোরে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে প্রশ্ন করা হলে, তখন তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

সোমবার সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ওই মন্তব্য করেন, তখন তিনি পার্থের নাম করেননি। কিন্তু ইঙ্গিত ছিল পার্থ ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দিকে। আবার শুক্রবার মাঝরাতে যখন ইডি পার্থকে গ্রেফতার করার কথা জানায়, তখন মমতাকে ‘পরমাত্মীয়’ বলে দাবি করে তাঁকেই ফোন করেছিলেন মন্ত্রী। ইডি সূত্রের দাবি, বেশ কয়েক বার ফোন করলেও, তা ধরেননি মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রেক্ষাপটে পার্থের ‘‘ঠিকই বলেছেন’’ শব্দবন্ধকে তাঁর অভিমানের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন অনেকে।

উল্টো মতও আছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, এত কিছুর পরেও তাঁকে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী এবং দলের মহাসচিব পদ থেকে সরাননি মমতা। মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত বলা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে দোষী প্রমাণিত হলে তবে। ফলে সে দিক থেকে পার্থের মুখে ‘‘ঠিকই বলেছেন’’ কথাটি খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বলা মনে হয়েছে তাঁদের।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য এবং তাতে পার্থের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ঠিক-বেঠিক এ ভাবে হয় না। পার্থবাবু আসলে আশা করে আছেন, মুখ্যমন্ত্রী ঠিক বাঁচিয়ে নেবেন। সেই জন্য চার বার ফোনও করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এখন জরুরি, পিসি-ভাইপোকে বঁচানো। বাকিদের যা হয়, হোক!’’ তাঁর দাবি, ‘‘(মুখ্যমন্ত্রী) সব জেনে সাধু সেজে থাকতে চাইছেন।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘পার্থবাবু মুখ খুললে, তৃণমূলের প্রায় গোটা দলটাই জেলে যাবে! তাই মুখ্যমন্ত্রীও পার্থবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।’’

সোমবার রাতে ইডি-র বিশেষ আদালত যখন পার্থকে ৩ অগস্ট পর্যন্ত তদন্তকারী সংস্থাটির হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়, তখন পার্থ ভুবনেশ্বর-এমসে। তত ক্ষণে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ‘ডিসচার্জ’ করে দেওয়া হলেও, রাতটুকু হাসপাতালে রাখার অনুমতি চেয়ে নেয় ইডি। সূত্রের দাবি, তাঁকে মঙ্গলবার ভোরে তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে বার করে নেওয়ার জন্য নাকি এমসের তরফেও পাল্টা আবেদন করা হয় ইডি-র কাছে। সূত্রের খবর, সেই কারণেই দুপুরের বদলে ভোরের প্রথম উড়ানে কলকাতা ফেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement