আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত।
মেধা নয়। জেদেরই জয় হল বিশ্বভারতীতে।
পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছাত্রদের জন্য স্নাতক স্তরে আসন সংরক্ষণ বাতিল হচ্ছে না, ঘোষণা করে দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ফলে লাগাতার দু’সপ্তাহ অচলাবস্থা তৈরি করেছিলেন যাঁরা, সেই ছাত্র, অভিভাবক এবং শিক্ষক-কর্মীদের কার্যত জয় হল। পিছু হটলেন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত।
পাঠভবন, শিক্ষাসত্রের পড়ুয়াদেরও প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে হবে, এই অবস্থান থেকে কেন সরে এলেন উপাচার্য? এ দিন রাতে সুশান্তবাবু বলেন, “আমি এখনও তা-ই বিশ্বাস করি। কিন্তু এ বিষয়টি ছাড়া আরও অনেক জরুরি কাজ করার আছে। বিশ্বভারতী অচল থাকলে চলবে না।” তা হলে তাঁর চেষ্টা কি ব্যর্থ হল? উপাচার্যের জবাব, “ঘোড়াকে জলের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু তাকে জোর করে জল খাওয়ানো যায় না।”
সদ্য-নিযুক্ত সহ-উপাচার্য স্বপন দত্ত অবশ্য আন্দোলনকারীদের দাবিকে সম্পূর্ণ নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন। পাঠভবন থেকে স্নাতকস্তরে ভর্তি “স্বাভাবিক”, আন্দোলনকারীদের মতো তিনিও তা-ই মনে করেন। তাঁর বক্তব্য, “এখানে যে প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, তা যথাযথ। তবে পাঠভবনের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এনে তাকে আরও প্রতিযোগিতামুখী করে তোলা যেতে পারে।”
অচলাবস্থা শেষ করতে এ দিন স্বপনবাবুকেই প্রধান ভূমিকায় দেখা গেল। আন্দোলনকারী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রো-ভোস্ট সবুজকলি সেন, তপতী মুখোপাধ্যায় এবং বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষেরা। পরে সাংবাদিকদের স্বপনবাবু বলেন, “এত দিন ধরে বিশ্বভারতীর স্কুলস্তরের পড়ুয়ারা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হত, সেই ব্যবস্থাই বহাল থাকবে।” তিনি আরও দাবি করেন, বিশ্বভারতীর পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের পদত্যাগ-সহ অন্যান্য দাবি নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।
তখনও নোটিস জারি হয়নি। অপেক্ষায় বিশ্বভারতীর আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা।
রাতে বাংলোর বাইরে এসে মাইক নিয়ে সুশান্তবাবু ভর্তির বিষয়ে আগের ব্যবস্থা বলবৎ থাকার কথা ঘোষণা করেন। উল্লাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। আগে সুশান্তবাবু দাবি করেছিলেন, অভ্যন্তরীণ কোটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়মকে লঙ্ঘন করে। এ দিন তিনি জানান, তফশিলি জাতি ও জনজাতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি নেওয়া হবে। সামগ্রিক ভাবে ভর্তির ‘কোটা’ ফের পুনর্গঠন করা হবে।
ঘোষণার পরও অবশ্য উপাচার্যের বাংলো ‘পূর্বিতা’র সামনে অবস্থান চলতে থাকে। আন্দোলনকারীদের দাবি, সহ-উপাচার্যের কাছে তাঁরা যে পাঁচ-দফা দাবিপত্র পেশ করেছেন, আলোচনার সেই নির্যাসে স্বাক্ষর দিন উপাচার্য। ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হোক উপাচার্যের কোটা বহাল রাখার ঘোষণা। এর ফলে কার্যত তিন দিন নিজের আবাসনে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে থাকলেন উপাচার্য। এ দিন তাঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে দেখার জন্য চিকিৎসককে ঢুকতে দিলেও, বিশ্বভারতীর আর কারওকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার মাঘমেলার উদ্বোধনে উপাচার্য বলেছিলেন, “বিশ্বভারতীতে অরাজকতা চলছে।” রবিবার তাঁর অবস্থান থেকে পিছু হটে তিনি এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন। তবে রাত অবধি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আন্দোলনরত অধ্যাপক-কর্মীরা অবস্থান চালিয়েই গিয়েছেন। অবস্থানে সামিল ছাত্রছাত্রীদের অনেকে অবশ্য শুক্রবার খিচুড়ি-বাঁধাকপি, শনিবার খিচুড়ি-মাংসের পর রবিবার ভাত-আলুপোস্ত-ডিমের ঝোল খেয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী