তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের দিতে হবে সমানাধিকার। প্রতীকী ছবি।
কর্নাটক-সহ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যে সরকারি চাকরিতে তাঁদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। বঙ্গেও সরকারি চাকরিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সুযোগ দেওয়ার দাবি উঠছে এবং চর্চা চলছে বহু দিন ধরে। নবান্ন সূত্রের খবর, আপাতত সরাসরি সংরক্ষণের পথে না-গেলেও কর্মক্ষেত্রে সম-সুযোগের নীতিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবং নবান্ন এই সিদ্ধান্ত রূপায়ণের কাজ শুরু করছে পুলিশে নিয়োগের মধ্য দিয়ে। এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “কলকাতা পুলিশকে দিয়ে এই পদক্ষেপ শুরু হচ্ছে। আগামী দিনে রাজ্য পুলিশের আইন সংশোধন করে সেখানেও এই নিয়োগ হবে।”
নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরকে দিয়ে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নিয়মবিধি তৈরি করিয়েছে রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনের মূল কথা ‘সব ক্ষেত্রে সম-সুযোগ’-এর বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (প্রোটেকশন অব রাইটস)’ বিধিতে। কর্নাটক-সহ কয়েকটি রাজ্য সরকার তাদের চাকরিতে ১% পদ তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংরক্ষিত রাখলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানাচ্ছে, সমান সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে ওঁদের জন্য পৃথক ভাবে কোনও সংরক্ষণ রাখা হচ্ছে না।
নতুন বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাব-ইনস্পেক্টর পদে আবেদনকারীর বয়স ২০ বছরের বেশি এবং ২৭ বছরের কম হতে হবে। তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্তদের ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমায় পাঁচ এবং ওবিসি বা অন্যান্য অনগ্রসরশ্রেণিভুক্ত ও তৃতীয় লিঙ্গের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে তিন বছরের ছাড় মিলবে। এই চাকরিতে শারীরিক উচ্চতা এবং ওজনও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। শারীরিক সক্ষমতা প্রমাণের পরীক্ষায় পুরুষ আবেদনকারীকে তিন মিনিটে ৮০০ মিটার, মহিলাদের দু’মিনিটে ৪০০ মিটার এবং তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডে ৪০০ মিটার দৌড়তে হবে।
নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে লিঙ্গসূচক পরিচয়পত্রের জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদন করা যাবে। আবেদনের ৬০ দিনের মধ্যে যাচাই পর্বের পরে সেই পরিচয়পত্র পাবেন আবেদনকারী। তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের দিতে হবে সমানাধিকার। তাঁদের জন্য শৌচাগার, পরিবহণ-সহ যাবতীয় পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। রক্ষা করতে হবে লিঙ্গ পরিচয়ের গোপনীয়তা। কোনও অভিযোগ জানানোর জন্যও পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। সে-ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক ১৫ দিনের মধ্যে তা খতিয়ে দেখবেন। এবং বিভাগীয় প্রধান পদক্ষেপ করবেন রিপোর্ট পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে। অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বিভাগ তৈরি করবে রাজ্য সরকার।