—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এক বছরের বেশি সময় ধরে বেতন না পাওয়ায় প্রকল্প অফিসে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মীরা। পুজোর মুখে চরম দুরবস্থার শিকার মৎস্য দফতরের অধীনস্থ রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ন’টি প্রকল্পের মোট ২১৬ জন অস্থায়ী কর্মী। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নিগমের অধীনে প্রকল্পগুলিতে মাছ চাষ থেকে শুরু করে অতিথি নিবাস রয়েছে। ১৪ মাস ধরে বেতন না মেলায় গত ২৯ দিন ধরে পূর্ব বর্ধমানের যমুনাদিঘি প্রকল্পের ৫১ জন কর্মী গেটে তালা ঝুলিয়ে প্রকল্পের কাজকর্ম পুরোপুরি বন্ধ রেখেছন। কর্মীদের দাবি, পুজো এসে গেলেও বকেয়া বেতন মেটাচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। দফতরে মন্ত্রী, আধিকারিকদের কাছে বারবার দ্বারস্থ হয়েও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।
মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, যমুনাদিঘি মৎস্যপ্রকল্প এশিয়ার বৃহত্তম মাছ চাষের প্রকল্প। এখানে মাছ চাষের পাশাপাশি অতিথিনিবাস রয়েছে। প্রচুর মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। কিন্তু যমুনাদিঘি প্রকল্প গত এক মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন সেই পর্যটকেরা। মৎস্য প্রকল্প বন্ধ থাকায় অনেকে যমুনাদিঘির অতিথি নিবাস ‘বুক’ করেও বাতিল করছেন।
দফতর সূত্রে খবর, কর্মীদের বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে কেবল যমুনাদিঘি প্রকল্পেই এখনও পর্যন্ত কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ১৬টি প্রকল্প রয়েছে। এদের মধ্যে ন’টি প্রকল্পের ৪-১৭ মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নরঘাট প্রকল্পের কর্মীরা ১৪ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় গত পাঁচ দিন ধরে প্রকল্প অফিসে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। অসহায় কর্মীদের অভিযোগ, ‘‘আমরা দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় বাজারে ধারদেনা করে সংসার চলছে। কেউ স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ প্রকল্পের ২৭ জন কর্মী দশ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তাঁদের এক জন ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় ছেলের জামাপ্যান্ট কিনে দিতে পারিনি। রোজ বায়না করছে। অনেক বুঝিয়ে বলেছি, পুজোর আগেই বকেয়া মোটা টাকা পেলে কিনে দেব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের উপর ভরসা, তাঁরা আমাদের উপর সদয় হবেন।’’ একই ভাবে উত্তর ২৪ পরগনার গোলতলার ৪৬ জন কর্মী এগারো মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের কাটনাদিঘি, পর্ব মেদিনীপুরের নরঘাট থেকে শুরু করে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, শিলিগুড়ি মৎস্য প্রকল্পের কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাননি। যমুনাদিঘি ও নরঘাট ছাড়া বাকি সাতটি প্রকল্পের কর্মীদের হুঁশিয়ারি, কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে বেতন না পরিশোধ করলে সমস্ত প্রকল্পে তালা ঝুলিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হবেন। মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রকল্পগুলি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলে আখেরে দফতরেরই ক্ষতি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত, কর্মীদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দিয়ে প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিক রাখা। না হলে দফতর মোটা টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।’’
পুজোর আগেও মৎস্য উন্নয়ন নিগমের কর্মীদর দীর্ঘদিন ধরে বেতন না মেলা প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে মাছ চাষ বাড়াতে বামফ্রন্ট আমলে মৎস্য উন্নয়ন নিগম তৈরি হয়েছিল। বর্তমান শাসক দলের উদাসীনতায় সেই সব স্বপ্নের প্রকল্প ধ্বংসের মুখে। আসলে পিসি, ভাইপো থেকে শুরু করে তৃণমূলের বড় নেতার পকেটে টাকা ঢুকলেই হল! কর্মীদের উপর এই সরকারের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।’’
কর্মীদের বেতন না পাওয়া নিয়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী ও নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিশ্বনাথকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁদের ফোন বেজে গিয়েছে। দু’জনকেই হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেজ করা হলেও উত্তর দেননি।