রবিবারই ছিল ‘শেষ’ অনুষ্ঠান।
সব ‘ইচ্ছে’ই যদি ‘আতসবাজি’ হত, ওঁদের রাতটা দিন করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ‘ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট’-এর কর্মচারীর জীবনে ভেসে থাকার আলোটুকুও নিভে গেল হঠাৎ। কাজের দরজাটা বন্ধ হচ্ছে ওঁদের!
কালো গেটের অর্ধেক বন্ধ। খোলা অর্ধেক দিয়ে বার করে আনা হচ্ছে ফুল সাজানো স্তম্ভ। গেটের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, ভিতরের ভাঙা হাট। প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল, সাজসজ্জা গোছগাছ চলছে। বাইরে আলোর ছিটেফোঁটা নেই। ভিতরেও অন্ধকার। এটাই এখন ‘ইচ্ছে’র ছবি। একদা ছিল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামে। পরে তার মালিকানা যায় ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে। রবিবার দুপুরে সেই ‘ইচ্ছে’তে হয়ে গেল ‘শেষ’ অনুষ্ঠান। সোমবার থেকে কী করবেন, কী ভাবে সংসার চালাবেন, কিছুই জানেন না শম্ভুনাথ মজুমদারেরা।
রবিবার পর্যন্ত ‘ইচ্ছে’তে কাজ করতেন শম্ভুনাথ। মাস দুই আগে থেকে ৩১ জুলাইয়ের জন্য ভাড়া করা ছিল বাড়িটি। রবিবার দুপুরে হয়ে গেল সেই অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান। প্রায় ২০০ লোক আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। বিকেলের পর থেকেই অন্ধকার। শম্ভুনাথ বললেন, ‘‘এখন কাকে চাবি দেব, তা-ও জানি না।’’
তাহলে কাজ বন্ধ করছেন কেন? বেরিয়ে এল হতাশা। বললেন, ‘‘টাকা পাব, কি পাব না, তাই কাজ বন্ধ করছি। কে মাইনে দেবে? আমাদের তো মাত্র সাত হাজার টাকা মাইনে দেয়। ২২৫ টাকা রোজ। সেই টাকাও না পেলে ১২ ঘণ্টা খেটে কি লাভ!’’
৯৫ নম্বর রাজডাঙা রোডে রয়েছে অর্পিতার ‘ইচ্ছে’। ২০১১ সালে সেই বাড়ি তৈরি হয়। পরে সেখানে নিজের প্রযোজনা সংস্থা খুলে বসেন অর্পিতা। ২০১৪ সালে বাড়ির মালিকানা যায় অর্পিতার নামে। তার পর থেকে শ্যুটিং এবং অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হত সেই বাড়ি। বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল একটি সংস্থা। সেই সংস্থারই কর্মী শম্ভুনাথ এবং আরও কয়েক জন।
সংস্থা থেকে নিয়মিত টাকা নিয়ে যেতেন ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা। জানালেন শম্ভুনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘এখান থেকে টাকা নিতেন, কোম্পানিকে দিতেন কি না জানি না। কমিশন নিয়ে যেতেন।’’ মাইনের এখনও সময় হয়নি, তাই এজেন্সিকে জিজ্ঞেস করতে পারছেন না। তবে জোর গলায় শম্ভুনাথ জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, টাকা পাব না। এ রকম অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে।’’
তার পরেই আবার শম্ভুনাথের গলায় আক্ষেপ, ‘‘সাত-আট হাজার টাকা মাইনে পেয়ে কেস লড়ার ক্ষমতা নেই আমাদের। টাকা না পেলেই বা কী করব? চিন্তা করুন, আমাদের বাচ্চাগুলোর কী হবে? কী ভাবে চলবে? ইডি এখানে কোনও টাকা পায়নি। পুরোটাই জমির গণ্ডগোল। তা-ও কাজ হারালাম আমরা।’’
কলকাতা রাজস্ব খাতার তালিকা অনুযায়ী রাজডাঙার ওই ঠিকানায় ১০, ১১ এবং ১২— তিনটি প্লট রয়েছে। ১১ নম্বর প্লটে দু’কাঠা নয় ছটাক জমির উপর রয়েছে ‘ইচ্ছে’। এই বাড়ির জন্য পুরসভাকে বছরে ২,৩৫৬ টাকা কর দেওয়া হত। যেখানে ওই এলাকায় ওই বাড়ি থেকে পুরসভার এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা কর পাওয়ার কথা। সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পুরসভা জানিয়েছে, তাদের কাছে বাড়িটি নিয়ে সঠিক তথ্য ছিল না।