শুধু কবি ও অনুবাদক নন, এ প্রজন্মের কবি-লেখকেরা পৌলোমীকে মনে রাখবেন এক সার্থক সম্পাদক হিসেবে। —ফাইল চিত্র।
বছরখানেক আগেই লিখেছিলেন অমোঘ কয়েকটি পংক্তি— ‘পরবর্তী দিন আসলে কোথাও টিকে নেই/ তার আলো পিছিয়ে আসছে/ আশা দিয়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে আজকের চিহ্নিত সীমানা।’ মারা গেলেন নব্বই দশকের সেই কবি, অনুবাদক, সাংবাদিক এবং সম্পাদক পৌলোমী সেনগুপ্ত। অসুস্থ ছিলেন বেশ কিছু দিন। বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর।
১৯৯৪ সালে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার সাব-এডিটর হিসেবে এবিপি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক শুরু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পৌলোমীর। বছরখানেক চাকরি করার পরে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। কিন্তু সাহিত্যের টানে ফিরে আসেন সাংবাদিকতার জগতে। এ বার ছোটদের পত্রিকা ‘আনন্দমেলা’য়। ২০১৭ থেকে এবিপি সংস্থার সব পত্রিকার এগ্জিকিউটিভ এডিটর পদে ছিলেন তিনি।
জন্ম বিহারের জামালপুরে। তারপর চলে আসেন মামাবাড়ি মালদহে। সেখানেই প্রাথমিক পড়াশোনা। আলিপুর মাল্টিপারপস গার্লস স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে। তখন থেকেই তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে দেশ, কৃত্তিবাসের মতো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।
আরও পড়ুন: পুজোর স্টলে বই বেচছেন বিমান, ‘হিট’ বুদ্ধদেবও
১৯৯৭-এ প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘পেনসিল খুকি’। পরের বছর ‘কৃত্তিবাস পুরস্কার’ জিতে নেয় সেটি। তারপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে ‘আমরা আজ রুমাল চোর’ (২০০০), ‘উল্কি’ (২০০৪), মেট্রোয় বৃষ্টি (২০১২) এবং কাব্যগ্রন্থের সঙ্কলন ‘মুঠোর মাপ উপচে যেন পড়ে’ (২০১৭)। ফরাসি ভাষায় পারদর্শী পৌলোমী বাংলায় অনুবাদ করেছেন অ্যাস্টারিক্স। ঝুম্পা লাহিড়ীর দু’টি বইয়েরও অনুবাদ করেছেন তিনি— ‘সমনামী’ (দ্য নেমসেক) এবং ‘নাবাল জমি’ (দ্য লো ল্যান্ড)। ইংরেজি ও হিন্দি থেকেও প্রচুর কবিতা ও গল্প অনুবাদ করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: মহোৎসবে নাশকতা! রাজ্যকে সতর্কবার্তা দিল কেন্দ্র
শুধু কবি ও অনুবাদক নন, এ প্রজন্মের কবি-লেখকেরা পৌলোমীকে মনে রাখবেন এক সার্থক সম্পাদক হিসেবে। নতুন, অনামী লেখকদের জন্য দরজা সব সময়ে খোলা রাখতেন তিনি। মা ও কিশোরী কন্যা প্রত্যাশাকে রেখে, পঞ্চাশে পা দেওয়ার আগেই, চলে গেলেন পৌলোমী।