প্রেমে-প্রণামে নটী নবনীতা স্মরণ প্রেসিডেন্সির

তাঁকে ঘিরে এমন অজানা গল্প শুনলে নবনীতা নিজে কী বলতেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১২
Share:

মায়ের লেখা কবিতা পাঠ করছেন নন্দনা সেন। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

এমন স্মরণসভা তাঁরই হতে পারে!

Advertisement

যখন ছয় দশক আগে ছেড়ে যাওয়া কলেজের সভাঘরে, সদ্য-প্রয়াত যশস্বী ছাত্রীটির প্রতি তাঁর অনুচ্চারিত প্রেমের কথা কবুল করেন সেই কলেজেরই আর এক বিশিষ্ট প্রাক্তনী। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী তথা প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলছিলেন কলেজে তাঁর সমসময়ের ইংরেজি অনার্সের মেয়ে নবনীতা দেবসেনের কথা। ‘‘কাউকে বলিনি, নবনীতাই আমার জীবনের প্রথম প্রেম।’’ নবনীতাকে কথাটা বলতে না-পেরে নিজেকে সরিয়ে নিতে বরং ‘বিদায় তমস্বিনী, ভুলে যেও এ ধ্রুবতারায়’ বলে কবিতা লিখেছিলেন অর্থনীতির ছাত্র অমলবাবু। আর কিছুই না-জেনে কবিতাটি এবং তাঁর প্রেরণাদাত্রীকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত চিঠি লিখেছিলেন নবনীতা!

তাঁকে ঘিরে এমন অজানা গল্প শুনলে নবনীতা নিজে কী বলতেন? নবনীতা-কন্যা নন্দনা সেন সভাঘর থেকে বেরোনোর সময়ে অমলবাবুকে বলে গেলেন, ‘‘মা কিন্তু আপনাকে ঠিকই ভালবাসতেন!’’ ভালবাসা, বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধার বিচিত্র ব্যঞ্জনায় এমন অজস্র গল্প ডানা মেলল রবিবার সন্ধ্যায়, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদ আয়োজিত নবনীতা স্মরণ অনুষ্ঠানে।

Advertisement

আরও পড়ুন: দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন

আরও পড়ুন: সরকারি হোম থেকেও অবাধেই বেরোন নির্যাতিতা

নবনীতার রম্যরচনা থেকে পড়ে শোনালেন ডাকসাইটে উকিল অনিন্দ্য মিত্র। নবনীতার পারিবারিক বন্ধু ও অর্থনীতির অধ্যাপিকা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় (নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা) আবার শোনালেন নবনীতার মাধ্যমেই তাঁর জোন বায়েজ়ের গানে কানে-খড়ির কাহিনি। আর একটি সরস গল্পে শোনা গেল, কী ভাবে বিদেশে কোনও ‘বঙ্গ-সম্মেলনে’ রাখী সরকারকে দেখতে পেয়ে ‘চল, চল, ওঠ তো! একটু সাঁওতালি নাচ নেচে আসি। ওদেরও শিখিয়ে দেব’ বলে তাঁর হাত ধরে নবনীতার টানাটানির কথা। বন্ধু নির্মলা বলছিলেন, নবনীতার বিস্ময়কর প্রাণশক্তির কথা। সিমা আর্ট গ্যালারির ডিরেক্টর রাখী সরকার বললেন, ‘‘নবনীতাদি সব বয়সের মেয়েদের রোল মডেল ছিলেন। ছেলেরাও ওঁকে দেখে উজ্জীবিত হত।’’

প্রাক্তন আমলা জহর সরকারের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক লাভের জন্য উনি (নবনীতা) কোনও মতামত পাল্টাতেন না। মনমোহন সিংহের মতো অনেককে চিনতেন! কিন্তু কারও কাছে ফেভার (সুবিধা) চাননি।’’ আর এক প্রাক্তন আমলা প্রসাদরঞ্জন রায় মনে করালেন তাঁর মেজোপিসি লীলা মজুমদারের সঙ্গে নবনীতার আদরের সম্পর্ক! স্বামী জন ম্যাকিনসনের সঙ্গে এসেছিলেন নবনীতার ছোট মেয়ে, অভিনেত্রী-লেখিকা নন্দনা সেন। মায়ের লেখা তিনটি কবিতা পড়লেন তিনি। নন্দনার ‘দিম্মা’ রাধারানী দেবীর মৃত্যুর সময়ের একটি কবিতা এখন যেন সদ্য-প্রয়াত নবনীতার কথাই মনে পড়ায়। নবনীতার ‘জীবন উদ্‌যাপনে’ মিশে গেল রাধারানী দেবী, লীলা মজুমদারের মতো শক্তিশালী কলমধারিণীদের স্মৃতিতর্পণও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement