elephant attack

কেঁপে উঠছেন বাবা, কথা নেই মায়ের

মার্বেলগুলি তুলে নিয়ে সবাইকে দেখাচ্ছে দীপাঞ্জন। কিন্তু সে নিজে কি দেখতে পাচ্ছে! তার চোখ দু’টি তো ঝাপসা। গাল বেয়ে অঝোরে গড়াচ্ছে জল।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৩
Share:

মৃত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাস।

মোটা কাগজ কেটে বানানো সাউন্ড বক্স, প্লাস্টিকের বোতল কেটে ভিতরে ভরে দেওয়া বিদ্যুতের সার্কিট, হাতে তৈরি বাল্ব... ঘরময় ছড়িয়ে কত কীই! সে সব একটা একটা করে তুলে নিয়ে সকলকে দেখাচ্ছে দীপাঞ্জন।

Advertisement

অথচ কয়েক মুহূর্ত আগেও এ সবের কোনওটাই ধরার অধিকার ছিল না অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্রটির। কিছু ধরতে গেলেই জুটত দাদার বকুনি। দু’দিন আগে তো তিনটি মার্বেল নেওয়ায় দাদার কাছে মারও খেয়েছিল সে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই মার্বেলগুলি মেঝেতে গড়াচ্ছে।

মার্বেলগুলি তুলে নিয়ে সবাইকে দেখাচ্ছে দীপাঞ্জন। কিন্তু সে নিজে কি দেখতে পাচ্ছে! তার চোখ দু’টি তো ঝাপসা। গাল বেয়ে অঝোরে গড়াচ্ছে জল। দীপাঞ্জন জানে, দাদার বাড়ি ফিরতে আরও কয়েক ঘণ্টা বাকি। সে জানে, বাড়ি ফিরলে দাদাকে প্রথমে উঠোনে শোয়ানো হবে। কিন্তু কোনও বকুনি নয়, ঝগড়া নয়। দাদা অর্জুন দাস এর পর চলে যাবে অন্যদের কাঁধে।

Advertisement

মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে বাবার সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময়ে হাতির হানায় প্রাণ গিয়েছে অর্জুনের। খবর পাওয়ার পর থেকে তাদের বাড়ির উঠোনে ভেঙে পড়েছে ভিড়। কেউ কিছু জানতে চাইলে ভাই দীপাঞ্জন ঘর থেকে একটা করে জিনিস এনে দেখাচ্ছে এবং বলছে, “দাদা নিজের হাতে বিদ্যুতের সরঞ্জাম বানাত।”

বৃহস্পতিবার দুপুর। জলপাইগুড়ি শহরে ছেড়ে বোদাগঞ্জ হয়ে গজলডোবা যাওয়ার পথে মহারাজঘাট। সেখানে বিষ্ণু দাসের বাড়ির উঠোন জুড়ে লোক। মাটিতে শুয়ে বুক চাপড়াচ্ছেন অর্জুনের ঠাকুমা বিমলা দাস। কিছুটা দূরে মাটির দাওয়ায় শুয়ে রয়েছেন মা সুমিত্রা দাস। তাঁর মুখে কোনও কথা নেই। এক সময়ে শুয়ে পড়েছেন বসে থাকতে না পেরে। এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। মাঝে মাঝে আসছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চর্তুবেদী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আসছেন প্রশাসনিক কর্তারা। বাড়ির লোকেদের জন্য এসেছেন চিকিৎসকও।

বছর ষোলোর অর্জুন পড়াশোনার সঙ্গে বিদ্যুতের কাজ করত। ঘরের ভিতরে অর্জুনের বাবা বিষ্ণু দাস। ভিড়ের সামনে দাঁড়াতেই পারছেন না তিনি। তাঁরই চোখের সামনে পুরো ঘটনা। তাঁর শরীর কেঁপেই চলছে। বললেন, “আশেপাশের বাড়ির কারও টিভি খারাপ হলে অর্জুন ঠিক করে দিত। কারও কাছে কাজ শেখেনি, কিন্তু ওইটুকু ছেলে কত কী করতে পারত।”

উঠোনের শেষে একটি কাঁঠাল গাছ। সে দিকে দেখিয়ে ভাই দীপাঞ্জন বলল, “গত বছরই তো বুনো হাতি উঠোনে এসে কাঁঠাল খেয়ে গেল। হাতি প্রায়ই আসে-যায় এখানে।” পুরো-হাতা গেঞ্জির হাতায় বারবার চোখ মুছছিল দীপাঞ্জন। চোখ তার লাল হয়ে আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement