শিলিগুড়ি থেকে সজনেখালি, পুরুলিয়া থেকে বসিরহাট— খাঁ খাঁ রোদে পুড়ছে গোটা রাজ্য। মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে। আর তাঁরা বলছেন চিন্তা কিছু নেই!
আবহাওয়া দফতর এখনই তেমন কোনও সুখবর দিতে না পারলেও রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করছেন বিদ্যুৎ-কর্তারা। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং সিইএসসি, উভয়েরই বক্তব্য, স্বস্তির মেঘের জন্যে ক’দিন হাপিত্যেশ করতে হলেও, বিদ্যুতের জন্য মোটেই ভাবতে হবে না রাজ্যে। বন্ধ হবে না পাখা, এসি বা ফ্রিজ।
গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত ক’দিন ধরেই বিদ্যুতের চাহিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দু’তিন দিনে সিইএসসি, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকা মিলিয়ে বিদ্যুতের মোট চাহিদা ৬,৯২৪ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ৭,৪০০ মেগাওয়াটে পৌঁছে গিয়েছে। দুই সংস্থাই বলছে, এতে ভাবার কিছু নেই। এখনই বিদ্যুৎ-ঘাটতির আশঙ্কা নেই। চাহিদা আরও বাড়তে পারে ধরে নিয়েই তৈরি রয়েছেন তাঁরা।
এই আশ্বাসে কতটা ভরসা করতে পারে রাজ্যবাসী? গ্রীষ্মের চওড়া ব্যাটে পরের পর বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারির কাছে হেরে যাবেন না তো তাঁরা! এই প্রশ্নের মুখেও মচকাতে নারাজ বিদ্যুৎ-কর্তারা। তাঁদের আশা, তেমন পরিস্থিতি আসার আগেই বৃষ্টি নেমে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
গত বছর এপ্রিল মাসেই তীব্র গরমে নাজেহাল হয়েছিল রাজ্যবাসী। সে সময়ে কেবল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকাতেই চাহিদা পৌঁছেছিল ৬০০০ মেগাওয়াটে। এ বছর এপ্রিল মাস জুড়ে পরপর বেশ ক’বার কালবৈশাখী হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তবে মে মাসের শেষ দিক থেকে বাড়ছে গরম। পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা। মাসের শেষে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় দৈনিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে গড়ে ৫,৪০০ মেগাওয়াট। সংস্থার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এমন গরম চললে এটা ৬,২০০ মেগাওয়াটে পৌঁছতে পারে।
সংস্থার দাবি, এমনটা ধরে নিয়েই আগাম ব্যবস্থা তাঁরা করে রেখেছেন। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘৬২০০ মেগাওয়াট কেন, তার থেকেও কিছু বেশি চাহিদা হলেও বিদ্যুতের কোনও অভাব হবে না রাজ্যে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতেও রাজ্যের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে কিছুটা বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। আর সেই পরিমাণটা ধরলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এখনই দিনে গড়ে ৬,১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
সিইএসসি এলাকাতেও ছবিটা একই। গত ক’দিনে লাফিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। সিইএসসি এলাকায় শুক্রবার চাহিদা ছিল ২,০০০ মেগাওয়াট। সংস্থার কর্তারা মনে করছেন, গরম টানা বাড়তে থাকলে চাহিদা ২,২০০ মেগাওয়াটের আশপাশে পৌঁছতে পারে। ব্যবস্থা যা রয়েছে, তাতেও সমস্যা হবে না বলেই দাবি সংস্থার কর্তাদের।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, প্রতি বছরের মতো এ বারেও গরমে চাহিদা মেটাতে এনটিপিসি, এনএইচপিসি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে রাখা হয়েছে। জলবিদ্যুৎ আসছে সিকিম, ভুটান থেকেও। এ ছাড়া, পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প থেকে জলবিদ্যুৎ ও রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির নিজস্ব উৎপাদন তো রয়েছেই। শুক্রবার পর্যন্ত এই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়েছে। সংস্থার কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে এখন গড়ে ২৬০০-২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। পুরুলিয়া দিচ্ছে ৯০০ মেগাওয়াটের মতো। চাহিদার বাকি অংশের কিছুটা কেনা হচ্ছে বাজার থেকে, আরও কিছু আসছে ‘পাওয়ার ব্যাঙ্ক’ থেকে। অর্থাৎ, রাজ্যে চাহিদা কম থাকার সময় বণ্টন সংস্থা রাজ্যের বাইরে যে সব সংস্থাকে বিদ্যুৎ দিয়েছিল, এখন গরমে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেবে।
সিইএসসি-ও প্রায় একই ব্যবস্থা করে রেখেছে। তাদের নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদনের বাইরে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছ থেকেও তারা প্রতি দিন গড়ে ৩০০-৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে। প্রয়োজনে আরও বেশি কেনা হবে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।
তবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকলেও, হঠাৎ হঠাৎ বিভ্রাট যে হচ্ছে না, তা নয়। এই পরিস্থিতি এড়াতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে দুই সংস্থা? পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই সংস্থাই তাদের কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছে। কোথাও বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্য কোনও লাইন থেকে তা নিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।