গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলছে। সব ম্যাচের আগেই টস হচ্ছে। সেখানেই নির্ধারিত হচ্ছে কোন দল আগে ব্যাট বা ফিল্ডিং করবে। কিন্তু বিশ্বকাপের ভরা মরসুমে অন্য ‘টস’ করতে হল সিপিএমকে। কয়েন ছুড়ে হেড-টেল দেখে নির্ধারিত হল দলের এরিয়া কমিটির সম্পাদক কে হবেন! প্রবীণ নেতাদের অনেকে বলছেন, দলের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
ঘটনাস্থল টালিগঞ্জ। একদা যে জনপদে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ছিল। বৃহস্পতিবার সেই টালিগঞ্জ-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক নির্বাচন হলেন টস করে। সম্পাদক নির্বাচনের সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উৎপল দত্ত ও সুব্রত দত্ত। সিপিএম সূত্রে খবর, জেলা সম্পাদক কল্লোলকেই কয়েন ছুড়তে হয়।
টালিগঞ্জের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তহবিল তছরুপের অভিযোগে দলের দুই নেতার ভূমিকা নিয়ে নালিশ জমা পড়ে রাজ্য কমিটিতে। তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য এবং রাজ্য কমিটির সদস্য মেঘলাল শেঠকে নিয়ে তদন্ত কমিশন তৈরি করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই কমিশন তদন্ত করে প্রথমে দুই নেতাকে ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করার সুপারিশ করে। সুপারিশ মেনে নেয় রাজ্য কমিটি। এর পাশাপাশি দুই নেতাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে। তার জন্য এক মাসের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল টালিগঞ্জ ও বেহালা পূর্বের দুই নেতাকে। অভিযুক্তদের এক জন, দলের একটি এরিয়া কমিটির সম্পাদক পদে ছিলেন। তাঁকে সেই পদও ছাড়তে বলা হয়।
কলেজ না ছাড়ায় দুই নেতাকে বহিষ্কার করে সিপিএম। এরিয়া কমিটির সম্পাদককে পার্টি তাড়ানোর ফলে অস্থায়ী ভাবে সম্পাদক করা হয় সুশান্ত পালকে। সিপিএম সূত্রে খবর, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বহিষ্কৃত নেতার ঘনিষ্ঠ।
উল্টো দিকের শিবির সম্পাদক করার জন্য ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তীকে সম্পাদক করার পরিকল্পনা করে। ধ্রুব যাদবপুরের প্রাক্তনী। টলিউডেও পা রেখেছেন তিনি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে গান লিখেছেন। সিপিএম সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের সভায় দু’পক্ষ দু’টি নাম প্রস্তাব করে। দু’পক্ষই সাত জন করে সমর্থন পায়। ‘ম্যাচ ড্র’ হওয়ায় টস করতে হয়। তাতে জিতে স্থায়ী সম্পাদক হলেন অস্থায়ী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা সুশান্ত পাল। পরাজিত হন ধ্রুব।
একটি দু’টাকার কয়েন দিয়ে টস করেন জেলা সম্পাদক কল্লোল। জানা গিয়েছে, কয়েন শূন্যে ছোড়ার আগে সুশান্ত ও ধ্রুবকে হেড ও টেল বাছতে বলা হয়। ধ্রুব হেড বলেন। কিন্তু শূন্যে ঘুরে তালুবন্দি হওয়ার পর দেখা যায় টেল পড়েছে। তার পর ‘আম্পায়ার’ কল্লোল জানিয়ে দেন, সুশান্তই সম্পাদক হচ্ছেন। তবে ধ্রুব শিবিরের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলেই দিচ্ছেন, পরের বার সম্মেলনে ‘খেলা হবে’।