ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
গত ৮ মে কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বসেছেন ফিরহাদ হাকিম(ববি)। বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীও। পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডে ‘চেয়ারম্যান’-এর ‘লাভজনক’ পদে বসার জন্য কেন তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের অন্যতম অধিকর্তা(আইন) বিজয়কুমার পাণ্ডে গত ১ জুলাই মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়ে ‘বিধায়ক’ ফিরহাদ সংক্রান্ত ৯ দফা প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন। যদিও নবান্ন এখনও কমিশনকে জবাব দেয়নি। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ঠিক সময়ে জবাব দেওয়া হবে।’’
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘আমি পুরসভার থেকে কোনও বেতন, ভাতা, গাড়ি-সহ কোনও সুবিধাই নিই না। লাভ নিলে তবেই না লাভজনক পদের প্রশ্ন উঠবে। বিজেপি এবং রাজ্যপাল রাজভবনে বসে এ সব কূটকচালি করছেন। আমাকে আদালত এই কাজ চালাতে অনুমতি দিয়েছে।’’
কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সতীশ তিওয়ারি গত ২২ জুন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে চিঠিতে লেখেন, রাজ্যপালের কাছে দু’টি অভিযোগপত্রে ফিরহাদ হাকিমের বিধায়ক পদ খারিজের ব্যাপারে আবেদন জানানো হয়েছে। সংবিধানের ১৯১(১)(ক) ধারা মেনে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ নিয়ে আর্জি জানানো হয়েছে। তাই সংবিধানের ১৯২(২) ধারা মেনে রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনের মতামত জানতে চান। এখন রাজ্যের উত্তর পেলে কমিশন তাদের অবস্থান জানাবে।
আরও পড়ুন: দলের ‘জমি’ ফেরাতে শুভেন্দুকে একক দায়িত্ব
আরও পড়ুন: শোভন-ভাবনা শেষ, বেহালা পূর্ব আসনে এ বার সেলিব্রিটি মুখ তৃণমূলের?
কমিশন জানতে চেয়েছে, কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরহাদ বেতন, ভাতা পান কি না, কী ধরনের কাজ তাঁকে করতে হয়, কবে তাঁর পদে বসার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, পুর প্রশাসকের পদটি রাজ্য সরকারের অধীনে কি না, নিয়োগ পত্র, নিয়োগকর্তা, নিয়োগ পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ, পুর-প্রশাসক হিসেবে কী কী আনুসঙ্গিক সুবিধা বিধায়ক ভোগ করেন এবং লাভজনক পদ সংক্রান্ত আইনে কলকাতার পুর প্রশাসকের চেয়ারম্যান পদটি ‘এক্সজেমশন’ বা ছাড়ের তালিকায় রয়েছে কি না।
২০০৭ সালে রাজ্যের লাভজনক পদ সংক্রান্ত আইনে ১১৫টি সরকারি পদকে লাভজনক বলে ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালে সংশোধিত আইনে রাজ্যে লাভজনক পদের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২৬ করা হয়েছে। একই ভাবে ১২ ধরনের পদকে লাভজনক নয় বলে ছাড় দেওয়া হয়েছিল আইনে। তবে কলকাতা পুর-প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যানের পদটি লাভজনক বা অলাভজনক হিসেবে উল্লেখ করা নেই।
পুরসভা সূত্রের দাবি, প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরহাদ কোনও সুবিধাই নেন না। ফলে ওই পদ লাভজনক হয় কী করে? দ্বিতীয়ত, করোনার পরিস্থিতিতে এই পদ তৈরি হয়ছে। কলকাতা হাইকোর্ট তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে। ফলে এটি করোনা অতিমারির সময়ে কলকাতাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র।
কমিশনের একটি সূত্রের দাবি, ২০০৬ সালে জয়া বচ্চনের লাভজনক পদে থাকা সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় ছিল, লাভজনক পদের লাভ গ্রহণ বড় কথা নয়, ওই পদে বসলে সুবিধা মিলতে পারে এমন কিছু থাকলেই তা লাভজনক পদ হিসেবে চিহ্নিত হবে। গত ৬ মে পুরসচিব সুব্রত গুপ্তের নির্দেশে বলা হয়েছে, পুরসভার মেয়র এবং মেয়র-ইন-কাউন্সিলের সমস্ত কাজ, দায়িত্ব অবিকল পালন করবে প্রশাসনিক বোর্ড। যার অর্থ, নির্বাচিত পুর বোর্ডের সমস্ত সুবিধা পুর প্রশাসনিক বোর্ডও ভোগ করতে পারে।