—ফাইল চিত্র।
জনসংখ্যার নিরিখে ভোটার সংখ্যা যত হওয়ার কথা, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টিতে ভোটার তার চেয়ে অনেক বেশি। গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত ভোটার তালিকায় এমন ছবিই উঠে এসেছে। ঘটনাচক্রে ‘অস্বাভাবিক’ ভোটার সংখ্যার বিধানসভাগুলির অধিকাংশই বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া।
জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যার স্বাভাবিক অনুপাত কী? নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের ক্ষেত্রে এই গড় অনুপাত হল ০.৬৯। অর্থাৎ, কোনও বিধানসভা এলাকায় জনসংখ্যা ১০০ জন হলে ভোটদাতা হবেন ৬৯ জন বা তার কাছাকাছি। কিন্তু এই ১৩২টি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা অনেক বেশি। কোথাও তো জনসংখ্যার ৮৪%-ই ভোটার!
উদাহরণ দিয়ে কমিশনের ওই কর্তা বলেন, ২০১১ সালের আদমসুমারির সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যোগ করলে ২০১৮-র ১ জানুয়ারি কোচবিহারের দিনহাটা কেন্দ্রের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮০। রাজ্যের জনসংখ্যা-ভোটার গড় অনুপাতের হিসাবে সেখানে ভোটার সংখ্যা হওয়া উচিত ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৫৯৫। কিন্তু সদ্য প্রকাশিত ভোটার তালিকা বলছে, ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২৯ হাজার ৬৩১ জন বেশি।
বাকি ১৩১টি কেন্দ্রেও কম-বেশি এমন ঘটনা ঘটেছে। যার জেরে চিন্তিত নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে যখন এই তালিকার ভিত্তিতেই পঞ্চায়েত ভোট হবে। কিন্তু কমিশনের কর্তারা একই সঙ্গে এ-ও মানছেন যে, নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এই ‘বাড়তি’ ভোটারদের চিহ্নিত করা অসম্ভব। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় জনসংখ্যা-ভোটার সংখ্যার অনুপাত প্রকাশ করতেও তাঁরা নারাজ।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীতে মাওবাদী: মমতা
তবে যে হেতু ভোটার সংখ্যার ‘অস্বাভাবিক’ বৃদ্ধি মূলত সীমান্ত-ঘেঁষা কেন্দ্রগুলিতেই হয়েছে, তাই এর পিছনে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকের ধারণা। তাঁদের মতে, স্বাভাবিক নিয়মে ১৮ পেরনোদের পাশাপাশি অনেক বেশি বয়স্কের নামও এ বার প্রথম ‘সরাসরি’ তালিকায় উঠেছে। জানা গিয়েছে, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমানের কাটোয়া, কালনা মহকুমা ও বীরভূমের অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার বেড়েছে ‘অস্বাভাবিক’ হারে। এর মধ্যে বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার সব কেন্দ্রে ‘বাড়তি’ ভোটারের রমরমা। যদিও ব্যারাকপুর মহকুমার কোনও আসনে অস্বাভাবিক ভোটার বৃদ্ধি হয়নি।
তবে ২০১১ সালের জনগণনাকে ভিত্তি ধরে এই অঙ্ক কষার ব্যাপারে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। যদিও কমিশনের ব্যাখ্যা, বরাবর সেটাই হয়ে এসেছে। তুলনা টানার মতো অন্য তথ্যও তাদের হাতে নেই।